শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দূর করুন

21

কোনোভাবেই দেশের পুঁজিবাজারের অস্থিরতা দূর করা যাচ্ছে না। দূর করা যাচ্ছে না মন্দা। যখন দেশের অর্থনীতি সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড হয়েছে, ঠিক সেই একই সময়ে উল্টোপথে হাঁটছে শেয়ারবাজার। পুঁজিবাজারের এই মন্দা অবস্থা ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলছে। কেনার চেয়ে বিক্রির চাপ অনেক বেশি। আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম। শেয়ারের দাম কমে যাওয়া থেকে অস্থিরতার সৃষ্টি। বিনিয়োগকারীর অনাস্থা আর অস্থিরতার সংকটে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু আস্থা ফেরেনি বাজারে। পুঁজিবাজারে ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বীমা খাতের ২৭ কোম্পানিকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেপ্টেম্বরে এ নির্দেশনার দুই মাস পর জানা গেল বেঁধে দেওয়া সময়ে তো আসছেই না; বরং উল্টো আরো ছয় মাস সময় চেয়েছে কোম্পানিগুলো।
তুলনামূলক বিচার করলে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল পাঁচ হাজার ৯৫০ পয়েন্ট। সেই সূচক গত রবিবার নেমে আসে চার হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে। টানা বিক্রির চাপে গত মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক কমে ৭৮ পয়েন্ট। এটি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। লেনদেন কমতে কমতে নামে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক কমেছে ১৪৪ পয়েন্ট। অন্যদিকে চলতি বছরের শেষ ৯ মাসে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ কমেছে ৮৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তবে প্রথম দুই মাসে পুঁজিবাজারে ৪৯৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার নিট বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। সেই হিসাবে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে ৩৭৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের বিগত ১১ মাসের তথ্য বলছে, দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পিছুটান দিয়েছেন। বছরের শুরুতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে শেয়ার কেনার পরিমাণ বাড়লেও বাকি ৯ মাস ধরে শেয়ার বিক্রি করছেন বিদেশিরা।
বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মূলত আস্থার সংকটই বাজারকে অস্থির করে রেখেছে। ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির পর অনেক আইন-কানুন করা হয়, গঠন করা হয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। ২০১০ সালে আবার কেলেঙ্কারি ঘটে শেয়ারবাজারে। এসইসির নাকের ডগায় বসেই কারসাজিকারীরা সর্বস্বান্ত করে দেয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ২০১০ সালের সেই ঘটনার পর আবার পুনর্গঠন করা হয় এসইসিকে। কিন্তু আস্থার সংকট কাটেনি। যার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্থায়ী প্রবণতা হচ্ছে বাজারের অব্যাহত পতন। বিনিয়োগকারীরা কেন আস্থাহীন, সেটা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারলেই পুঁজিবাজারের মন্দা কাটতে পারে। এর কোনো বিকল্প নেই।