মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা

11

সর্বগ্রাসী করোনাভাইরাসের ছোবলে স্থবির পুরো দেশ। শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযোগ মুখথুবড়ে পড়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমে যে অচলাবস্থা এবং দুঃখজনক দুর্ভোগ নেমে এসেছে, সেখান থেকে পুনরায় নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা খুব দুঃসাধ্য হতে পারে। প্রাইমারী থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে মাত্রায় অসহনীয় বিপর্যয়কে মোকাবেলা করছে তার মাসুল গুণতে হবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে। সময়মতো ক্লাস, পরীক্ষা নির্ধারিত পর্যায়ে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হলে যে চরম অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়তে হবে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারটা কঠিন।
বাংলাদেশের ৫ কোটি শিক্ষার্থী এই মুহূর্তে নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত হচ্ছে, যা করোনাভাইরাসের আরও এক বিধ্বংসী প্রভাব। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো কাটে শিক্ষা কার্যক্রমের মহতী উদ্যোগে। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া, শ্রেণীকক্ষে পাঠ নেয়া, শিক্ষকদের পাঠ দানের নিজেদের সমর্পিত করা এমন সব নৈমিত্তিক রুটিন তাদের সুশৃঙ্খল বিদ্যাচর্চাই নয়, ভবিষ্যতের নির্দেশিত পথকে তৈরি করতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। নির্ধারিত সময়ে পাঠক্রম সমাপ্ত করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সেও শিক্ষাজীবনের অতি আবশ্যক কর্মযোগ।
করোনা মহামারীর এমন দুর্যোগে ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে অলস জীবন কাটাচ্ছে। ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। পরিস্থিতি সাপেক্ষে সেপ্টেম্বরের আগে খোলার সম্ভাবনাও নেই। আটকে আছে এসএসসির ফলাফল। বিলম্বিত হচ্ছে এইচএসসির পরীক্ষা। কলেজের একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা, সঙ্গে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কলেজ ভর্তির সমস্ত আয়োজন আজ দিশেহারা, অনিশ্চয়তার আবর্তে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিলেও পরীক্ষা কিভাবে হবে, সেটা ধারণা করা যাচ্ছে না। কারণ অনলাইনভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতিকে নিরুৎসাহিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। আর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবেমাত্র সেশন জট কাটিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা এবং বর্ষ থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে। সেখানে নতুন করে আবার কি বিপর্যয় হানা দিতে পারে তাও অনুমান করা যায় না। এমন দোলাচলে যখন পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, সেখানে করোনা দুর্যোগ কাটার পরও নিয়মিত পর্যায়ে ফিরে আসা কত দিনে সম্ভব, তা সময়ই নির্ধারণ করে দেবে।
প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনার কার্যক্রম শুরু হলেও অনেকেই সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রান্তিক অঞ্চলে অনেকের ঘরে টিভি নেই, কিন্তু স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী আছে। আবার টিভি থাকলেও সব জায়গা থেকে সংসদ টিভি দৃশ্যমানও হচ্ছে না। ফলে প্রান্তিক পরিসীমার শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম বিপাকে। আবার নগর, শহর, বন্দরে যারা সংসদ টিভির শ্রেণী পাঠক্রম দেখছে সেখানেও প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা পদ্ধতির মান নিয়ে। সব মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা এক হ-য-ব-র-ল-অবস্থায়। শেষ অবধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ৫ কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত তা বলতে পারে না কেউ।