সুনামগঞ্জে বিভিন্ন হাওরের ধান কাটা কার্যক্রম তদারকি করলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার

24

আল-হেলাল সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হাওরের ধান কাটার কাজ তদারকি করলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাওরের ধান কাটা কার্যক্রম তদারকি করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট বাপাউবোর প্রধান প্রকৌশলী মো. নিজামুল হক ভূইঁয়া, সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নিবাস দেবনাথ, সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সমীর বিশ্বাস প্রমুখ।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২৬ এপ্রিল হতে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এর ফলে সুনামগঞ্জ জেলায় অকাল বন্যা হওয়ারও আশংকা রয়েছে। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আগাম বন্যার হাত থেকে বোরো ফসল রক্ষার জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে ফসল কাটার কার্যক্রম তদারকি করছি।
উল্লেখ্য যে এ জেলায় এ বছর হাওর ও হাওর বহির্ভূত ২,১৯,৪৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড/উচ্চফলনশীল/বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। উক্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বুত খাদ্য সংকট নিরসনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে। এদিকে জানা যায় আগামী ২৬ এপ্রিল হতে প্রবল বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ থেকে আগাম বন্যা হওয়ারও আশংকা রয়েছে। এ অবস্থায় আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য বিভাগীয় কমিশনার নিজে ছুটে এসেছেন সুনামগঞ্জ। এসে ২০ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, আগাম বন্যা মোকাবেলায় করণীয় এবং হাওরে ধান কাটা বিষয়ে মতবিনিময় করেন সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের সাথে। যত দ্রুত সম্ভব ধান নিরাপদে কেটে ঘরে তোলার জন্য যে সকল ক্ষেত্রে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন ব্যবহার করা সম্ভব সেসকল ক্ষেত্রে তা ব্যবহারের উপর জোর নির্দেশনা প্রদান করেন। এ জেলার বাহির হতে আগত কৃষি শ্রমিকের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন থাকা সুনামগঞ্জের পরিবহন শ্রমিক, বারকি শ্রমিকসহ এ জেলার আনসার, কর্মক্ষম ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে ধান কাটার কাজে নিযুক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, করোনা ভাইরাস জনিত বৈশ্বিক এ সংকটকালে খাদ্য ঘাটতি এড়ানো এবং দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করায় সুনামগঞ্জের সকলকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে উদ্দীপ্ত হয়ে মঙ্গলবার ৯,০০৫ জন নতুন শ্রমিক ধান কাটার কাজে নিযুক্ত হয়েছেন।
বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাংইর হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ধান কাটা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এছাড়াও স্থানীয় সরকার উপপরিচালক, মোহাম্মদ এমরান হোসেন জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওর এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে সঠিক সময়ে নিরাপদে ধান কর্তন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কৃষক প্রতিনিধিগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে দ্রুততম সময়ে ধান কাটার কাজে সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে নিযুক্ত হবার বিষয়ে এবং সকল সচল হার্ভেস্টিং মেশিন ধান কাটার কাজে নিয়োগের বিষয়ে অনুরোধ জানান। এছাড়া জেলা পর্যায়ের দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে ধান কাটার কাজ যথাযথ মনিটরিং এর জন্য উপজেলা ওয়ারী দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে, কৃষকগণকে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে জেলার সকল শ্রেণি মানুষের সহযোগিতায় সঠিক সময়ে নিরাপদে কৃষকের ঘরে ধান উত্তোলন করা সম্ভব হবে।