জেলা ও মহানগর আ’লীগের ২০ দিনব্যাপী মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালা শুরু ॥ ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের প্রত্যক্ষদর্শী ১০ জনকে সম্মাননা প্রদান

12
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষের ২০ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে রেসকোর্স ময়দানে বসে সেই ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনা ১০ জনকে খুঁজে তাদেরকে বিশেষ সম্মাননা জানিয়েছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

স্টাফ রিপোর্টার :
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবর্ষ স্মরণে ২০ দিনব্যাপী মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর রিকাবিবাজারের সিলেট জেলা স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষের ২০ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যোন) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’’ যে ভাষণকে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে ধরা হয়। বঙ্গবন্ধুর সেই ‘অমর কবিতাখানি’ শুনতে সেদিন জড়ো হয়েছিলেন মুক্তিকামী লাখো বাঙালি। সিলেটের অনেকেও সেদিন রেসকোর্সে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে। মুজিববর্ষের আয়োজনে সেই ভাষণের প্রত্যক্ষদর্শীদের খোঁজে বের করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে ১০ জনকে সম্মাননা জানানো হয়েছে শনিবার, আরেক ৭ মার্চে। এই আয়োজনের মধ্য দিয়েই মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন অতিবাহিত করে সিলেট আওয়ামীলীগ।
সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
আর ৭ মার্চের ভাষণের অন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে সম্মাননাপ্রাপ্ত কারীরা হচ্ছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন লস্কর ময়না, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদ উদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন হেলাল, হায়দার হোসেন চৌধুরী মুক্তা, অধ্যাপক গ ক ম আলমগীর, এডভোকেট মো. মইনুল ইসলাম ও মো. মঞ্জু মিয়া। এদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ মঞ্জু মিয়াকে হুইল চেয়ারে করে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। সংবর্ধিতদের উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিরা হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়ার পর তারা স্মৃতিচারণ করেন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
‘নব প্রজন্মের নব চেতনায় বঙ্গবন্ধু’ শ্লে­াগানে শুরু হওয়া মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই সম্মননা পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ঐতিহাসিক সেই ভাষণের শ্রোতারা। গর্ব আর আনন্দে আপ্লুত হয়ে সম্মাননাপ্রাপ্ত মোশাররফ হোসেন চোখের জল মুছে বলেন, ‘বুঝ হওয়ার পর তাকি (থেকে) আওয়ামী লীগ করি। কোনদিন বক্তৃতা দেই নাই (করিনি)। আফনারা ভালা থাকবা; আওয়ামী লীগ করবা।’ সেই ভাষণের সরাসরি শ্রোতা হওয়ার গর্ব আজও অনুভব করেন বলে জানান মোশারফ হোসেন। বেলা পৌনে ৩টায় বঙ্গবন্ধুর সেই অবিস্মরণীয় ভাষণ প্রচারের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এসময় মঞ্চে বঙ্গবন্ধু মুজিবের অবয়ব নিয়ে উপস্থিত ছিল শিশু-কিশোররা।
নাট্যকর্মী রজতকান্তি গুপ্তের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হত না। একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যাতে উদ্ধুব্ধ হয়ে লাখো বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় মুজিববর্ষের প্রথম দিনের আয়োজন। আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সিলেটে মুজিববর্ষের নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে সারা দেশের ন্যায় সিলেট বিভাগের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে।
সিকৃবি : যথাযোগ্য মর্যাদা ও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ঐতিহাসিক ৭ মাচ উদযাপিত হয়েছে। সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। মুজিব শতবর্ষ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই শোভাযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মতিয়ার রহমান হাওলাদার। এসময় রেজিস্ট্রার মোঃ বদরুল ইসলাম শোয়েব, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) প্রফেসর ড. মিটু টৌধুরীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি সমগ্র ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর প্রশাসন ভবনের সামনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ভাইস-চ্যান্সেলর, জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি, ডিন কাউন্সিল, শিক্ষক সমিতি, অফিসার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কর্মচারী পরিষদ, হল প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টরিয়াল বডিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এরপর সিকৃবি কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুজিব শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মোঃ আবদুল বাসেতের সঞ্চলনায় গণতান্ত্রিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আতিকুজ্জামানের সঞ্চলনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মতিয়ার রহমান হাওলাদার। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড, ফার্মাকোলজি ও টক্সিকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন, অফিসার পরিষদের সভাপতি মোঃ আনিছুর রহমান, ফিজিওলোজি বিভাগের সহকারী প্রফেসর ডাঃ সাইফল ইসলাম, কর্মচারী পরিষদের প্রতিনিধি মোঃ শামসুল ইসলাম প্রমুখ।
মহানগর হকার্স লীগ : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২০ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্স লীগ সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে শনিবার নগরীর রেজিষ্ট্রারি মাঠ থেকে এক র‌্যালি বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রিকাবীবাজারস্থ নজরুল অডিটোরিয়ামে গিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের ৭ মার্চের সভায় যোগ দেন। এর আগে সুরমা মার্কেট অস্থায়ী কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্সলীগ সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক মো. রকিব আলীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. আশিকুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আহমদ, মো. জানে আলম, মতিন আহমদ।
এ সময় অন্যনাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্য নজরুল ইসলাম, মো. রুমন আহমদ, হাসান আহমদ, মো, সাদিকুল ইসলাম, মো. রাশেদুল ইসলাম, আয়াত আলী, মো. জিহাদ মিয়া, মো. জুয়েল আহমদ, অর্জুন মজুমদার, মো. জাহাঙ্গীর আলম, শ্রী প্রাণেষ দে, ইউসুফ মিয়া, মো. আবু বক্কর, মো. রুবেল আহমদ, লাল মোহন, মো. আখলিছ মিয়া, মো. তারেক আহমদ, মো. আব্দুল আওয়াল, মো. তাজিম আহমদ, মো. রফিক আহমদ, মো. বাছিত আাহমদ, মো. আব্দুল আজিজ প্রমুখ।