সড়ক শৃংখলা আইন প্রয়োগ হউক

8

রাজধানী ঢাকার রাস্তায় লেন মেনে সুনির্দিষ্ট গতিতে যানবাহন চালানোর নিয়ম রয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে যানবাহনের গতিসীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কিন্তু ঢাকার যানবাহনচালকরা বিশেষ করে গণপরিবহনের চালকরা কি সেই নিয়ম মেনে গাড়ি চালাচ্ছেন? গত শুক্রবার দুপুরে উত্তরায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর প্রাণ গেছে একটি বাসের ধাক্কায়। আগের মধ্যরাতে যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেছে মামা-ভাগ্নের। বেপরোয়া গতিতে চালানো বাসের ওই চালকদের নিয়োগপত্র ছিল না। একই দিনে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। রাজধানীবাসীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে সিএনজিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা ও অ্যাপভিত্তিক মোটরবাইক। রাস্তায় নেমে এই অটোরিকশা ও মোটরবাইকের চালকরাও যেন বড় যানবাহনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন।
ঢাকা সহ দেশের গণপরিবহন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের বেশির ভাগেরই কোনো নিয়োগপত্র নেই। চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালান তাঁরা। রাজধানীর ৩৫ হাজার অটোরিকশাচালকের বেশির ভাগেরই প্রশিক্ষণ নেই। ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ, ২০০৬ সালের শ্রম আইন এবং সর্বশেষ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এ নিয়োগপত্র দেওয়ার বিধান থাকলেও বেসরকারি পরিবহন মালিকরা অতি মুনাফার লোভে চালকদের নিয়োগপত্র দিচ্ছেন না। ফলে দেশে কমপক্ষে ২৫ লাখ পেশাদার গাড়িচালক নিয়োগপত্র ছাড়া গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। গাড়িচালকদের মতে নিয়োগপত্র ও বিধি অনুসারে বেতন-ভাতা না দিয়ে গাড়ির মালিকরা তাঁদের বেশি ট্রিপ দিতে বাধ্য করছেন। ফলে গতিসীমাসহ সড়কের আইন পুরোপুরি মানা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। মালিকদের মতে দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো সমস্যা হলে তার দায় মালিকপক্ষের ওপর বর্তাবে। শ্রমিকরা ঘন ঘন কোম্পানি বা পরিবহন পরিবর্তন করায় নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। শ্রমিক নেতাদের মতে নিয়োগপত্র বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি নতুন সড়ক পরিবহন আইনে। শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও ততটা সুরক্ষিত হয়নি। যেটুকু আছে, তা-ও বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর করার ব্যবস্থা না থাকায় মালিকরা আইন মানছেন না।
এ অবস্থার অবসান হতে হবে। নতুন প্রণীত আইন বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণও বাঞ্ছনীয়। আমরা আশা করব, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।