আবুধাবি এডিএসডব্লিউ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

27
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) আবুধাবি সাসটেইনেবল উইক’এ জায়েদ সাসটেইনেবল অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি’ অনুষ্ঠানে আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ সুলতান আল-নাহিয়ান এর উপস্থিতিতে জায়েদ সাসটেইনেবল অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ‘আবুধাবি সাসটেনেবিলিটি উইক’ ও ‘জায়েদ সাসটেনেবিলিটি প্রাইজে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সোমবার বেলা এগারোটায় আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারের (এডিএনইসি) আইসিসি হলে আবুধাবি সাসটেনেবিলিটি উইক (এডিএসডব্লিউ) ২০২০ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। আট দিনব্যাপী এই বিশ্বের অন্যতম বিশাল সাসটেনেবিলিটি সমাবেশ এডিএসডব্লিউ ২০২০ অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক, শিল্প বিশেষজ্ঞ, অগ্রণী প্রযুক্তিবিদ ও পরবর্তী প্রজন্মের সাসটেনেবিলিটি নেতৃবৃন্দের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ১১ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সাসটেনেবিলিটি সম্মেলন চলবে। খবর বাসসর।
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে পৌঁছলে আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান তাঁকে স্বাগত জানান।
এ বছর পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন দেশের দশটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে জায়েদ সাসটেইনেবল প্রাইজ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ও শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও সাতটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন।
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিরিবাতির ইউতান তারাওয়া ইয়েতা জুনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের প্রতিনিধির হাতে পুরস্কার তুলে দেন। স্কুলটি গ্লোবাল হাইস্কুল ক্যাটাগরিতে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ইউদোদো, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, ফিজির প্রধানমন্ত্রী জোসাইয়া রোরেকে বেইনিমারামা, সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ্যানা ব্রনাবিক, আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আরমেন সারকিসিয়ান ও সিয়েরালিওনের প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বিও অংশগ্রহণ করেন।
এ বছর একই ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত আরও পাঁচটি স্কুল হচ্ছে- কলম্বিয়ার এয়ার বাতাল্লা, নাইজিরিয়ার হাকিমি আলিয়ু ডে সেকেন্ডারি, মরক্কোর আল আমল জুনিয়র হাইস্কুল, ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মোস্তার ও নেপালের ব্লুম নেপাল স্কুল।
অপর চারটি ক্যাটাগরির আওতায় সুইডেনের জিএলওবিএইচই স্বাস্থ্য ক্যাটাগরিতে, খাদ্যে ঘানার ওকুয়াফো ফাউন্ডেশন, জ্বালানিতে ফ্রান্সের ইলেক্ট্রিশিয়ান্স উইথআউট বর্ডার্স এবং পানি ক্যাটাগরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেরেস ইম্যাজিং পুরস্কার লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। এ বছর এডিএসডব্লিউ-এর প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স,কম্যুনিটি এ্যান্ড ইয়ুথ’ এবং এর ছয়টি প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে- জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানি ও খাদ্য, চলাচলের ভবিষ্যত, মহাকাশ, স্বাস্থ্যে বায়োটেকনোলজি ও কল্যাণের জন্য প্রযুক্তি।
এডিএসডব্লিউ ২০২০-এর বৈশিষ্ট্যের ছয়টি স্তম্ভে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও ইউএই ভিশন ২০২১-এর সঙ্গে মিল রয়েছে। গ্লোবাল সাসটেইনিবিলিটি এ্যান্ড হিউমেনিটারিয়ানিজম-এর অন্যতম অগ্র সেনানী ইউএই’র স্থপতি মরহুম শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ স্বীকৃতি হচ্ছে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘জায়েদ সাসটেইনিবিলিটি প্রাইজ’।
এই পুরস্কার ওইসব প্রতিষ্ঠান ও হাইস্কুলসমূহের স্বীকৃতি দেয় ও পুরস্কৃত করে যেগুলো কার্যকরভাবে পরিচালিত, উদ্ভাবনীমূলক ও টেকসই সমাধানে প্রেরণা প্রদান করে। পাঁচটি ক্যাটাগরির পুরস্কার হচ্ছে- স্বাস্থ্য, খাদ্য, জ্বালানি, পানি ও গ্লোবাল হাইস্কুল।
গত ১১ বছরে এই পুরস্কার ৭৬ বিজয়ীসহ ৩১ কোটি ৮০ লাখ লোককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এটি সারা বিশ্বের মানুষকে টেকসই সমাধান ও প্রযুক্তি গ্রহণের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসে আবুধাবি সাসটেইনিবিলিটি উইক চলাকালে এই বার্ষিক পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান হয়।
শেখ হাসিনা তিন দিনের সরকারী সফরে রবিবার রাতে আবুধাবি পৌঁছেন। প্রধানমন্ত্রীর সোমবার সন্ধ্যায় বাহরাইন, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও ইউএইতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর হোটেলে রাষ্ট্রদূতদের এক সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা।
এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে কিভাবে আরও বেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ইউএই’র প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এবং আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ও ইউএই’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্টের পত্নী শেখ ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী এডিএনইসি’র হল-১১তে আয়োজিত ‘দ্য ক্রিটিক্যাল রোল অব উইমেন ইন ডেলিভারিং ক্লাইমেট এ্যাকশন’ সংক্রান্ত সাক্ষাতকার অধিবেশনে যোগ দেবেন। এই সফরকালে প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগের ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করার সুযোগ নিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাতে দেশে ফিরবেন।