বিচারে দীর্ঘসূত্রতা রোধ করুন

11

আদালতে প্রচুর মামলা বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ। সুপ্রিম কোর্টের ২০১৭-২০২২ সাল পর্যন্ত কৌশলগত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বিচারব্যবস্থার অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ঝুলে থাকা বা বিচারাধীন মামলা। তাদের হিসাবে ৩১ লাখ মামলা ঝুলে আছে এবং সংখ্যাটি বাড়ছে। বেসরকারি হিসাবে ঝুলন্ত মামলা ৩৩ লাখের বেশি। এসবের মধ্যে দুর্নীতিবিষয়ক মামলার সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার। এ অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে বটে, তবে দুদকের মামলার আসামিদের সবাইকে এখনো শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। তদন্ত, অনুসন্ধান ও বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা বিরাজমান। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতিবিষয়ক মামলা পরিচালনার জন্য আলাদা স্থায়ী প্রসিকিউশন টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত প্রসিকিউশন টিম কাজ করছে।
সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, সম্পদ-বিবরণীতে ফাঁকি ও অর্থপাচারে সংশ্লিষ্ট থাকার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ওই সব মামলা তদন্তাধীন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। এসব সফল হলে দুদকের মামলায় লক্ষণীয় অগ্রগতি দেখা যাবে। কিন্তু অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিতে না পারলে, ঝুলে থাকা মামলা সময়মতো নিষ্পত্তি করতে না পারলে সংস্থাটির অভিযানের সফলতা পাওয়া যাবে না।
দুদকের সাড়ে তিন হাজার অভিযোগের তদন্ত ও অনুসন্ধান ঝুলে আছে। জনবলের অভাবে এ ধরনের মামলার সংখ্যা বর্ধমান। বিচারাধীন মামলাও বাড়ছে। দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মামলাও এখনো বিচারাধীন। ২৫-৩০ বছর ধরে এসব মামলা ঝুলছে। বেশ কিছু মামলার তদন্তও ঝুলে আছে। উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর। এর আগে ছিল দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
মামলার ঝুলে থাকা বিচারিক কার্যক্রমে চাপ সৃষ্টি করে। বৈচারিক সুষ্ঠুতার অভাব ঘটায়। কারণ তদন্তে ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় অনেক সময় প্রকৃত ঘটনা আড়াল হয়ে যায়। এতে বিচারব্যবস্থার ওপর জন-আস্থাও কমে। সুশাসন বিঘ্নিত হয়। মামলা ঝুলে থাকার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবও বড় কারণ। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে হলে, উন্নয়নের সুষমতা নিশ্চিত করতে হলে, সুশাসন কায়েম করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। তাহলে বিচারপ্রক্রিয়ায় গতিসঞ্চার হবে; বিচার প্রভাবমুক্ত হবে। অপরাধীরা পার পাওয়ার সুযোগ পাবে না। এসব বিষয় আমলে নিয়ে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহল তথা সরকার তৎপর হবে বলে আমরা আশা করি।