নয়াসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে মসজিদের মিনার ভেঙ্গে পড়ে ২ পথচারী আহত, মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সা বিধ্বস্ত

42
নগরীর নয়াসড়কস্থ জামে মসজিদের মিনার ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সহ নেতৃবৃন্দ।

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর নয়াসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রেখে মসজিদের উঁচু মিনার ভাঙাতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে ২ পথচারী আহত ও এক মোটর সাইকেলসহ সিএনজি অটোরিকশা বিধস্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াসড়ক জামে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে মীরবক্সটুলা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এতে ঐ এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নয়াসড়ক-কাজিটুলা সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সিলেট সিটি কপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করার পর বিকেলের দিকে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে নগরীর অনেক এলাকা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। তবে বড় ধরণের হাত হতে রক্ষা পেয়েছে ঐ এলাকার লোকজন। এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ সিসিকের এসকেবেটর চালক মাসুমকে আটক করেছে। আটককৃত মাসুম শাহপরান এলাকার বাদেবল গ্রামের তৈয়ব আলীর পুত্র।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ও নগরীর নয়াসড়ক পঞ্চায়েত কমিটির উদ্যোগে নয়াসড়ক জামে মসজিদের পুন:নির্মাণ কাজ চলছে। চলমান কাজের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সকালে মসজিদের মিনার ভাঙার কাজ শুরু হয়। তবে উঁচু মিনারটি ভাঙার আগে নেওয়া হয়নি কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রেখেই শুরু হয় ভাঙার কাজ। তাও উপর থেকে না ভেঙে নিচ থেকে ভাঙা শুরু করে সিটি করপোরেশনের শ্রমিকরা। ভাঙার একপর্যায়ে পুরো মিনারটি ভেঙে হুড়মুড়িয়ে পড়ে সড়কের উপর। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মসজিদের মিনার ভাঙতে গিয়ে তা রাস্তায় ভেঙে পড়ে। এতে পার্শ্ববর্তী একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিও হেলে পড়ে ও তার ছিঁড়ে গিয়ে নয়াসড়ক, জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেল রোড, কাজীটুলা, মানিকপুর রোডসহ অনেকে এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, গত রবিবার কয়েকজন ভাঙারি শ্রমিক (স্থাপনা ভাঙার কাজ করা শ্রমিক) মসজিদের মিনার ভাঙার কাজ পায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সোমবার সকালে সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মী মসজিদের মিনার ভাঙার কাজ শুরু করেন। তারা মিনারের মাঝামাঝি অংশে এসকেবেটর দিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করলে এক পর্যায়ে মিনারটি ভেঙে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। অপরিকল্পিতভাবে কাজ করা ও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তারা।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সেলিম মিঞা জানান, চালক কোন প্রকার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়েই কাজ শুরু করে। পুলিশকেও বিষয়টি অবগত করা হয়নি। তার ভুলের কারনেই এমন ঘটনা। একারনে তাকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। আহত লোকের নাম জানা যায়নি। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার দে বলেন, সিটি করপোরেশনের একটা ভূমিকম্প ঘটিয়ে ফেলছে। তাদের পরিকল্পনাহীন কাজে আমরা বিপদে পড়েছি। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। অনেকগুলো পুল, ফিডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামত করে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে আমরা কাজ করছি। আমাদের ৫০/৬০ জন কর্মী দুর্ঘটনার পর থেকেই কাজ করছেন। তবে পুরো কাজ শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। অনেকগুলো লাইন ছিঁড়ে গেছে। তিনি বলেন, ঝামেলা করলো সিটি করপোরেশন অথচ বিদ্যুৎ না পেয়ে লোকজন এখন আমাদের গালি দিচ্ছে।
সিলেট সিটি কপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরীর নয়াসড়ক জামে মসজিদের পুননির্মাণ কাজ চলছিল। মিনারটি সরানোর কাজ করছিল সিটি করপোরেশনের একটি বুলডোজার। কাজ চলা অবস্থায় অসাবধানতাবসত জনসাধারণের চলাচলের রাস্তার ওপর মিনারটি ভেঙে পড়ে। এতে মিনারের সঙ্গে বিদ্যুতের একটি খুঁটিও হেলে পড়েছে বলেও জানান মেয়র আরিফুল। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে।