রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক ভূমিকা চাই

11

২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ করে এবং বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি। ওদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা অভিযান চালানোর দায়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে গাম্বিয়া। গাম্বিয়ার অভিযোগ, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা, ধর্ষণ ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৪৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে জমা দিয়েছে দেশটি। শুরুতে মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। নিকট-ভবিষ্যতে এই চ্যালেঞ্জ আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেই নানা মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সংকটকে আরো গভীর করতে যাচ্ছে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক আচরণ। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করে তাদের ‘বিদেশি’, ‘বাঙালি’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করার ইঙ্গিত দিচ্ছে মিয়ানমার।
এদিকে এক দিনের ঢাকা সফরকালে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গত জুন মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গার পরিস্থিতি বর্ণনা করা কঠিন। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে তাঁর মন খুব খারাপ হয়েছিল। সাংবাদিকদের কাছে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক হিসেবে অভিহিত করেন বান কি মুন। তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় এবং এখন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব হিসেবে তিনি মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। রোহিঙ্গারা যাতে স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে জন্য তাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের আরো উদার হওয়া এবং সহযোগিতা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বান কি মুন এটাও উল্লেখ করেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে জাতিসংঘ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ছাড়া এই গভীর সংকট থেকে উঠে আসা বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।