সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ সাংবাদিকদের ভেতরেও হয়তো ক্যাসিনোতে জড়িত কাউকে পাওয়া যাবে ॥ ভয় বলে কোন কথা আমার ডিকশনারিতে নেই

50
আজারবাইজানে ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে গণভবনে পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে ‘আইওয়াশ’ বলে বিএনপির অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়ে তাদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, যারা (বিএনপি) আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ, যাদের বিরুদ্ধে খুন-দুর্নীতি-অগ্নিসন্ত্রাস-অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে, যে দলের শীর্ষ দুজনই দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত, তারা দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে কথা বলে কোন মুখে, কোন সাহসে। অপরাধী অপরাধীই। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, সবাইকে ধরা হবে। কখন কাকে ধরা হবে, তা সময়ই বলে দেবে। আর অপেক্ষা করুন, চলমান অভিযান আইওয়াশ কিনা তা দেখতে পারবেন। আর জীবনের ভয় বলে কোন কথা আমার ডিকশনারিতে নেই। ভয় থাকলে এমন অভিযানে নামতাম না।
মঙ্গলবার গণভবনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি নিষেধাজ্ঞা জারির আশঙ্কা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বলেছে তারা সাকিবের পাশে থাকবে। বিসিবি সব সময় সাকিবের সঙ্গে আছে এবং সব রকম সহযোগিতা দেবে। তবে আইসিসি যদি কোন ব্যবস্থা নেয়, সেক্ষেত্রে তো এখানে আমাদের খুব বেশি করণীয় থাকে না। ক্যাসিনো কান্ড নিয়ে সাংবাদিকদের একহাত নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতদিন ধরে ক্যাসিনো পরিচালিত হয়ে আসছে, আপনারা (সাংবাদিক) তো কেউ কোন নিউজ করলেন না? আমারও প্রশ্ন, এ রকম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে কেউ জানে না? খোঁজ করলে সাংবাদিকদের ভেতরেও হয়তো ক্যাসিনোতে জড়িত কাউকে পাওয়া যাবে। তখন কী হবে? তবে মানুষ যখন অপরাধের সঙ্গে জড়ায় হয়তো প্রথম কেউ জানে না। কিন্তু একপর্যায়ে তাকে ধরা পড়তেই হবে। কেননা, কখন কে কোন অপরাধে ধরা পড়ে তার কোন ঠিক নেই। আর অপরাধ করলে ধরা তাকে পড়তেই হবে।
মূলত গত ২৫ ও ২৬ অক্টোবর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ এবং অর্জিত সাফল্যগুলো তুলে ধরতেই প্রধানমন্ত্রীর এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু প্রশ্নোত্তর পর্বে ঘুরেফিরেই দেশে চলমান শুদ্ধি অভিযান, ক্রিকেট খেলোয়াড়দের হঠাৎ ধর্মঘট, সাকিবের বিরুদ্ধে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা ছাড়াও দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক বিষয়গুলোই উঠে আসে। এসব ইস্যুতে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের স্বভাবসুলভ হাস্যোজ্জ্বলভাবেই সব প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েও অনেক কিছু জানতে চান এই সরকারপ্রধান। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে মূল মঞ্চে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ছিলেন। তারা দুজন ছাড়াও মন্ত্রী সভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভয় পেলে অভিযানে নামতাম না : ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয় পেলে এ অভিযানে আমি নামতাম না। আর আমি যখন নেমেছি, তখন কি করে, পরিবারের কেউ কিনা, কোন দলের সেটি আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় না।
তিনি বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক পরিবারে আমার জন্ম। আমার বাবাকে (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু) দেখেছি কীভাবে সাহসের সঙ্গে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই ভয় এ শব্দটা আমার ছোট বেলা থেকেই নেই। ভয় পাওয়ার লোক আমি না। ভয় পেলে এ অভিযানে আমি নামতাম না। আর আমি যখন নেমেছি, তখন সে কি করে, কোন দলের সেটি আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় না।
বিএনপিকে ‘দুর্নীতির খনি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তার (জিয়া) হাতে গড় দল, সেখানে আপনারা দেখেন বিএনপির প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা তো আছেই। হত্যা, খুন, দুর্নীতি, অগ্নিসন্ত্রাস- হেন কোন কাজ নেই যা তারা করেনি। সেই দলের নেতা যিনি চেয়ারপার্সন (খালেদা জিয়া), দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে এখন কারাগারে। আরেকজন যাকে (তারেক রহমান) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন করা হলো, সে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দুর্নীতি মামলায় দ-িত হয়ে এখন দেশান্তরে। তাদের (বিএনপি) মুখে এত কথা কোথায় থেকে আসে, কোন সাহসে।
রাশেদ খান মেনন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী : একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের প্রধান শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিতর্কিত বক্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এক নেতা (রাশেদ খান মেনন) হয় তো কিছু কথা বলেছেন। কারণ তার মনে তো একটা দুঃখ হতেই পারে। তিনি জেনে হোক, না জেনে হোক তাকে এক ক্লাবের চেয়ারম্যান করা হয়েছে এলাকার এমপি হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই কিছু তথ্য এসেছে। যখন কিছু তথ্য এসেছে, তিনি কিছু কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, তিনি (রাশেদ খান মেনন) হয়তো ভুলে গেছেন, তিনিও নির্বাচন করে জয়ী হয়ে এসেছেন। নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে তার নির্বাচিত হওয়াটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। কাজেই সেটা তিনি তখন বুঝে বলেছেন, নাকি না বুঝে বলেছেন- সেটা আমি জানি না। রাশেদ খান মেননের ব্যাপারে ১৪ দলের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ নাসিম তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন, উনি (মেনন) যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে ১৪ দল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ ইস্যুটি তো সেখানেই শেষ হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত নির্বাচনে জনগণ যদি আমাদের ভোটই না দিত, আর জনসমর্থন যদি আমাদের পক্ষে না থাকত, তাহলে তো যেভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, যার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, দেশবাসী আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। দেশবাসী খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। তারাও (বিএনপি) সে ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারল না কেন? গত নির্বাচনে এদেশের সব ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ, এমনকি সব সরকারী প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকে যেভাবে আমাদের সমর্থন দিয়েছে, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা ‘অভূতপূর্ণ ঘটনা’Ñ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপির মতো এখন কোন হাওয়া ভবন নেই, যেখানে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ভাগ দিতে হতো।
ক্যাসিনো ইস্যুতে সাংবাদিকদের একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী : ক্যাসিনো ইস্যুতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে এ ইস্যুতে কোন সংবাদপত্রে কোন সংবাদ প্রকাশিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোন সাংবাদিক, কোন সংবাদপত্র কিন্তু একটা নিউজও করেননি যে, বাংলাদেশে ক্যাসিনো খেলা হয়। আমি যদি প্রশ্ন করি- আপনারা (সাংবাদিক) এত খবর রাখেন, এ রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি (ক্যাসিনোর) এসে গেছে, এত কিছু হলো আপনারা কেউ খবর রাখলেন না? কেউ খবর পেলেন না? ক্যাসিনো সম্পর্কে তো কেউ কোন নিউজ দেননি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সব থেকে বেশি সংবাদপত্র। কয়েকশ’ সংবাদপত্র। এক সময় বাংলাদেশে একটাই চ্যানেল ছিল। আমি তো সবকিছু ওপেন করে দিলাম। ৩২টির মতো টিভি চ্যানেল চালু। কোন একটি চ্যানেল থেকে এ বিষয়ে কোন একটি নিউজ দিতে পারলেন না। এর জবাব কি আপনারা জাতির কাছে দিতে পারবেন? পারবেন না। তিনি বলেন, মানুষ যখন কোন অপরাধের সঙ্গে জড়ায়, সে মনে করে- আর কেউ জানবে না। কিন্তু ধরা কোন না কোনভাবে পড়ে যেতেই হয়। এটা হলো বাস্তবতা। আমরা চাচ্ছি, দেশটা শান্তিপূর্ণভাবে চলুক। দেশের উন্নতি হোক। দিন-রাত পরিশ্রম করি দেশের মানুষের শান্তিতে থাকে, জীবনমান যেন উন্নত হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাসিনো কান্ডে ক্রিকেট বোর্ড জড়িত এটা ঠিক না। এটা বোর্ডের কিছু না। ক্যাসিনোতে যিনি ছিলেন, তিনি ধরা পড়েছেন। এছাড়া দেশের মধ্যে এ ধরনের একটা কান্ড (ক্যাসিনো) চলেছে, কেউই তো জানতো না! সংবাদমাধ্যমও তো জানে না! আমিই তো এদের ধরার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এতগুলো চ্যানেল আছে, আপনারা কেউ নিউজ করতে পারলেন না? আমরাই এদের ধরব, আবার আমাদেরই প্রশ্ন করবেন- সেটা তো হতে পারে না। আমিই ধরেছি, জানতে পেরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালাতে বলেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো অভিযান চালাচ্ছি। কে কখন কিভাবে ধরা পড়বে, বলা যায় না। আমরা কিন্তু ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ধরেছি। তাদের কেউ বহাল তবিয়তে আছে, সেটাও ঠিক না। এখন আপনারা খুঁজে দেখেন, কোথায় কী পাওয়া যাচ্ছে। তবে কারও যদি জুয়া খেলার আকাক্সক্ষা থাকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি- একটি চর বরাদ্দ দিন। সেখানে খেলুক, ট্যাক্স বসান। একটা নীতিমালা করুন, অন্তত ট্যাক্সটা তো পাওয়া যাবে।
দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এমন একশ’ জনের নাম আপনি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনকে। এ রকম আর কতজনের তালিকা আপনার হাতে আছে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কতজনের তালিকা আছে, সেটা কেন আমি এখন বলব? তবে এতটুকু বলতে পারি- কোন এক পত্রিকার সম্পাদক, কোন এক ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে ফোন করে বলেছে- কিছু টাকা চায়, সেটা যদি না দেয়া হয় তাহলে এমন লেখা লিখবে যে, তার জীনটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। সেটা আগে বের হোক তারপর জানবেন। ব্যাংকের এমপি ফোন করে বলে দিয়েছে কত দিতে হবে। না দিলে নিউজ হয়ে যাবে। এটা রেকর্ড আছে।
সাকিবের পাশে থাকবে বিসিবি : ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে যে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে, সেটার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিসিবি বলেছে তারা সাকিবের পাশে থাকবে। এ বিষয়ে আমাদের আসলে বেশি কিছু করার নেই। তবে বিসিবি সব সময় সাকিবের সঙ্গে আছে এবং সব রকম সহযোগিতা দেবে। তবুও আমরা এটুকু বলব যে, আমাদের দেশের একটা ছেলে, সারা বিশ্বে ক্রিকেটে তাঁর একটা আলাদা অবস্থান আছে। ভুল সে করেছে এটা ঠিক। সে এটা বুঝতেও পেরেছে। তারপরও আমরা, বিশেষ করে বিসিবি বলেছে তার পাশে থাকবে। তবে খুব বেশি যে করণীয় আছে সেটা কিন্তু না।
সাকিব আল হাসনের মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের ওপর জুয়াড়িদের নজর থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে যারা ক্রিকেট জুয়াড়ি থাকে তারা যোগাযোগটা করে। ওর (সাকিব) যেটা উচিত ছিল যখন ফিক্সিংয়ের যোগাযোগ করেছে, তখন সাকিব এটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। ফলে সে এ কথাটা আইসিসিকে জানায়নি। নিয়মটা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে আইসিসিকে জানানো উচিত ছিল। এখানে সে একটা ভুল করেছে।
ক্রিকেটারদের হঠাৎ করে আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ক্রিকেটারদের কোন দাবি-দাওয়া থাকলে তা বিসিবিকে তারা জানাতে পারত। কথাবার্তা নেই, হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকা জীবনে শুনিনি। ক্রিকেটাররা এভাবে ধর্মঘট ডাকে তাও শুনিনি। আন্দোলনে না গিয়ে দাবি-দাওয়া উত্থাপন করতে পারত। তবে সেটা এখন মিটমাট হয়ে গেছে। কেননা, আমরা যেভাবে আমাদের ক্রিকেটারদের সমর্থন দিই, পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে এমন সমর্থন দেয়। আমাদের ক্রিকেটাররা খেলছেও ভালো।
পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা থাকবে না : সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজ নিয়ে শুরু হওয়া সমস্যার সমাধান অচিরেই হয়ে যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা থাকবে না। এটা সাময়িক। কয়েকদিনের মধ্যে এটি ঠিক যাবে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ চলে এসেছে। আরও আসবে। ইতোমধ্যে খবর পেলাম, প্রায় ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ চলে আসছে খুব শীঘ্রই। তাছাড়া ১০ হাজার টন তো চলে আসবে কয়েক দিনের মধ্যেই। কাজেই চিন্তার কিছু নেই।
এ সময় রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ ছাড়াও তো রান্না হয়। আমি নিজেও তো পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করি। তবে কারা পেঁয়াজ মজুদ করছে? মজুদ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে কতদিন রাখা যাবে? পেঁয়াজ তো পঁচে যাবে, বেশিদিন তো রাখা যাবে না। তাই চিন্তার কিছু নেই।
সৌরভের আমন্ত্রণে কলকাতা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারত সফরে কলকাতায় টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। এই টেস্ট দেখার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলী আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাওয়াত নয়। বাঙালি ছেলে সৌরভের দাওয়াত। সৌরভের দাওয়াত বলেই আমি সেখানে যাব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকব এবং বিকেলেই চলে আসব।
এ বিষয়ে বিসিসিআইয়ের প্রধান হওয়ার পর সৌরভ গাঙ্গুলীর ফোন পাবার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সৌরভ বাঙালির ছেলে। সে একসময় ক্রিকেটে খুব নাম করেছিল। এই প্রথম একজন বাঙালী হিসেবে বিসিসিআইয়ের প্রধান হলো। এরপর সে (সৌরভ) ফোন করেছিল। আমাকে দাওয়াত দিল। বলল, আমি যেন ওখানে যাই এবং খেলার শুরুতে অন্তত থাকি। আমি রাজি হয়ে গেলাম। কলকাতা টেস্ট উপলক্ষে তিস্তা চুক্তি নিয়ে না হলেও ক্রিকেট কূটনীতি থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুটা রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেটকে নদীর মধ্যে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
বিএনপি দুর্নীতির কারখানা : সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা চলমান অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা নিজেরাই (বিএনপি) দুর্নীতির খনি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়াই দেশে প্রথম দুর্নীতির দুয়ার খুলে দিয়েছিল। তার হাতে গড়া দলটি খুন, দুর্নীতি, অর্থপাচার, অস্ত্র চোরাচালানসহ হেন কোন অপকর্ম নেই যার সঙ্গে জড়িত ছিল না। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টার সঙ্গেও তারা জড়িত। ক্ষমতায় থাকতে তারা দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল।
তিনি বলেন, বিএনপির এতই অবৈধ অর্থ যে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন এফবিআই অফিসারকে পর্যন্ত ভাড়া করেছিল আমার ছেলে জয়কে (সজীব ওয়াজেদ জয়) অপহরণ ও হত্যা করার জন্য। পরে তদন্ত করে এফবিআই নিজেরাই এই ষড়যন্ত্র ধরে ফেলে, তদন্তে উঠে আসে বিএনপিই এই ষড়যন্ত্রটি করেছিল। বিএনপির নেত্রীর এক ছেলের ঘুষের পাচার করা টাকা আমরা উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনতে পেরেছি। যারা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা, তারা এ অভিযান নিয়ে কথা বলে কীভাবে?
তিনি বলেন, দেশ চালাতে এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি। রাজনীতি করতে গেলে বহুজন বহু ভাষণ দেবে, অনেক কথা বলবে। কিন্তু তাদের কথা শুনলে তো দেশের মানুষের জন্য কোন কাজই করতে পারব না। আর ভয় আমরা ডিকশনারিতে নেই। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হত্যার জন্য অতীতেও অনেক চেষ্টা হয়েছে, ষড়যন্ত্র এখনও আছে। সমস্ত বৈরী পরিবেশে উজানে নাও ঠেলেই আমরা ক্ষমতায় এসেছি, দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ দেশের উন্নয়ন করতে পারে না আমরা তা প্রমাণ করেছি। উন্নয়নে সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়ের নাম। আমরা দেশের হৃদগৌরব আবারও ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছি।