বিশ্বনাথে তিন ওলির মাজার নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি, উত্তেজনা

11

বিশ্বনাথ থেকে সংবাদদাতা :
বিশ্বনাথের পিটাকরা গ্রামে একই বাওন্ডারির ভেতরে সংরক্ষিত হযরত শাহ্ সুনামদি (র:), ‘হযরত শাহ্ সরবদি (র:) ও হযরত শাহ্ সনদাসি (র:) এর মাজার ও মাজারের জায়গা নিয়ে দু’পক্ষে চরম উত্তেজনা বিরাজ করেছ। গতকাল রবিবার ( ১৩ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিন বিষয়টি তদন্ত করেন ওয়াক্ফ প্রশাসকের ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন। আর প্রশাসনিক ওই কর্মকর্তার আগমনকে কেন্দ্র করে তদন্তে পেশীশক্তি খাটাতে দু’পক্ষই পাশাপাশি স্থানে পৃথক বৈঠকের আয়োজন করে মুখোমুখি অবস্থান নেন। এতে দিনভর দু’পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করে।
পঞ্চায়েত পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজি ময়না মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ আজাদ মেম্বার, মোতাওয়াল্লী আক্তার হোসেন ও খাদিম মাসুক মিয়া। আর অন্য পক্ষে রয়েছেন একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত সিকন্দর আলীর ছেলে শাহ্ সিকন্দর নামে মাজারের মোতায়াল্লী দাবিদার মো: ইলিয়াছ আলী আল্ হুমাইদি।
পঞ্চায়েতসহ শতাধিক গ্রামবাসীর দাবি, পাকিস্তান আমল থেকে গ্রামের একই স্থানে তিন ওলির মাজার রয়েছে। ১২৭৩ খৃষ্টাব্দে মাজারে জায়গা দান করেন বর্তমান মোতায়াল্লী আক্তার হোসেনর পূর্ব পুরুষ আরজান উল্লাহ। আরজান উল্লাহ’র মৃত্যুর পর বংশপরিক্রমায় তাদেও পরিবারের মধ্যে প্রথমে ইজ্জাত উল্লাহ, তারপর আব্দুল মতলিব ওরফে কটাই মিয়া, এরপর সাদিকুর রহমান মাজারের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে সাদিকুর রহমান যুক্তরাজ্য চলে গেলে ওয়াক্ফ প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষে তার ছোটভাই আক্তার হোসেন প্রায় ১৫ বছর ধরে মোতায়াল্লীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১২৭৩ সন থেকে প্রতি বাংলা সনের ২০ পৌষ তারিখে ওই তিন ওলির মাজারে বার্ষিক ওরস পালনও করা হয়।
অন্যেিদক কিছুদিন আগে ওই তিন ওলির মাজার ভুয়া দাবি করেন একই গ্রামের সিকন্দও আলীর ছেলে মো: ইলিয়াছ আলী আল্ হুমাইদি। তার দাবি এটি ওই তিন ওলির মাজার নয়, এটি তার পূর্ব পুরুষ শাহ্ সিকন্দর (র:) এর দরগা শরিফ। আর ওই দরগা শরিফে জায়গাও দিয়েছেন তার পূর্ব-পুরুষরা এবং মোতাওয়াল্লীর দায়িত্বেও ছিলেন তার পূর্ব পুরুষেরা।
তবে, মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজি ময়না মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ আজাদ মেম্বার, মোতাওয়াল্লী আক্তার হোসেন ও খাদিম মাসুক মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি মসজিদের জায়গা দখল করে বসতঘর নির্মাণ করেন প্রতিপক্ষ মো: ইলিয়াছ আলী আল্ হুমাইদি। আর এতে প্রতিবাদ করেন মাজারের বর্তমান মোতাওয়াল্লী আক্তার হোসেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মাস দুয়েক আগে মো: ইলিয়াছ আলী আল্ হুমাইদি বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসনে তিন ওলির মাজারটি ভুয়া এবং মাজারের জায়গা তার পূর্ব পুরুষের দাবি করে রিখিত অভিযোগ দেন ইলিয়াছ আলী। গ্রামবাসী বা পঞ্চায়েতের মতে ইলিয়াছ আলীর কোন পূর্ব পুরুষদের মধ্যে কিংবা তাদেও এলাকায় শাহ সিকন্দর (র:) নামে কোন ব্যাক্তি ছিলেন না। ভুলবশত এসএ রেকর্ডে মাজারের জায়গা শাহ সিকন্দর মাজার নামে রেকর্ডভুক্ত হয়ে গেছে।
তিন ওলির মাজার ভুয়া দাবি করে মো: ইলিয়াছ আলী আল হুমাইদি এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রামের ওই তিন ওলির মাজারে কারোরই অস্থিত্ত নেই। এটি তার পূর্ব পুুরষ শাহ্ সিকন্দর (র:) এর দরগা শরিফ। এছাড়া তার পূর্ব পুরুষ জহুর আলী ও দাদা আজিম উল্লাহ ওই দরগা শরিফে মোতাওয়াল্লীর দায়িত্বে ছিলেন বলেও জানিয়েছেন ইলিয়াছ আলী।
ওয়াক্ফ প্রশাসনে ওই তিন ওলির নামে মাজারটি নতিভুক্ত রয়েছে জানিয়ে ‘ওয়াক্ফ প্রশাসন সিলেট ও সুনমাগঞ্জের দায়িত্বে থাকা জেলা ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, শাহ সিকন্দর (র:) দরগা শরিফ নামে কোন দরগা শরিফ নেই। তিনি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তিনি তদন্ত করেছেন এবং দু’পক্ষের কাগজপত্র নিয়েছেন। তদন্ত শেষে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্তভাবে আদেশ প্রদান করবেন বলেও জানান তিনি।