আজ বিশ্ব নদী দিবস

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জালের মতো বিছিয়ে থাকা এই দেশে নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে এখনও গরমিল রয়েছে। তবে সংখ্যা নিয়ে গরমিল থাকলেও অধিকাংশ নদীই যে হুমকির মুখে এ বিষয়ে কারোর মধ্যেই দ্বিমত নেই। তারা বলছেন, একদিকে উজানে বাঁধ নিয়ে একতরফা পানি সরিয়ে নেয়ার কারণে দেশে নদ-নদীর ভবিষ্যত নিয়ে যেমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে অপরদিকে তেমনি পলি পড়ে প্রবহমান অনেক নদী ভরাট হয়ে পড়ছে। এছাড়া দখল দূষণের কারণেও হুমকির মুখে পড়েছে অনেক নদী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব কারণে স্বাধীনতার পরে দেশে এখন পর্যন্ত শতাধিক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। মৃত্যুর প্রহর গুনছে আরও অনেক নদী। আজ বিশ্ব নদী দিবস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার সারাবিশ্বে এই নদী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তবে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের নদ নদী সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন। সরকারী পর্যায়ে এই দিবস পালনের তেমন গুরুত্ব নেই বললেই চলে। শুধু বেসরকারী কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন নদী বাঁচাতে সারা বছরই আন্দোলন করে আসছে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। কানাডার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, শিক্ষক ও নদী অন্তঃপ্রাণ ব্যক্তি মার্ক এ্যাঞ্জেলোর উদ্যোগে বিশ্বের নদী দিবস পালন করা হয়ে থাবে। ২০০৫ সাল থেকেই সারা বিশ্বে এটি পালিত হয়ে আসছে এবং ক্রমশ এই দিবসের পরিচিতি বাড়ছে।
বিশ^ব্যাপী নদী দিবস পালনের লক্ষ্য সম্পর্কে এই কর্মসূচীর ‘বৈশি^ক পরিষদ’ এর চেয়ারম্যান মার্ক এ্যাঞ্জেলো বলেন, ‘বিশ^নদী দিবস পালন হচ্ছে নদীর বা সারা পৃথিবীর পানি প্রবাহসমূহকে গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা। এই দিনটিতে নদীর বহুমুখী গুরুত্বকে তুলে ধরা, নদীর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা ও নদীর জন্য অধিক অভিভাবকত্ব নিশ্চিত করা। সারা বিশ্বেই নদীকে সুসংগঠিত হুমকির মোকাবেলা করতে হয়। একমাত্র নদীরক্ষা কাজে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই সতেজ নদী নিশ্চিত হতে পারে।
পরিবেশ সংগঠন বাপাসার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের নদীগুলো দ্রুত মারা যাচ্ছে, ওদের বাঁচাতে চাই। নদী ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সকল প্রকার ব্যবসা-বাণিজ্য-উন্নয়ন-চলাচল-পরিবহন-অর্থনীতি-রাজনীতি-শিল্প-সাহিত্য-গান-সংস্কৃতির মূল চালিকাশক্তি। তাই নদী যদি বিনষ্ট হয় তা হলে আমরাও ধ্বংসের দিকে ধাবিত হব। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সর্বোচ্চ সংকটের দেশও বাংলাদেশ। নদীরক্ষা আমাদের বেঁচে থাকার ও ভাল থাকার প্রধান চাবিকাঠি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি বা প্রবাহ না থাকায় বিলীন হওয়ার পথে দেশের এক-তৃতীয়াংশ নদী। বর্ষাকালে প্রবাহমান থাকা অর্ধেকের বেশি নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। সারা বছরই চলে চাষাবাদ। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে এগুলোকে আর নদী বলে মনে হয় না। আবার অনেক নদী বিলুপ্ত হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে গেছে। মৃত্যুর প্রহরও গুনছে অনেক নদী। এর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র, নেত্রকোনার মগড়া, কংশ, সোমেশ্বরী, যশোরের ভৈরব, কপোতাক্ষ, ইছামতি, বেতনা, মুক্তেশ্বরী, কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা, ঘোড়াউত্রা, ফুলেশ্বরী, খুলনার রূপসা, শিবসা, ডাকি, আত্রাই, ফরিদপুরের কুমার, বগুড়ার করতোয়া, কুমিল্লার গোমতি, পিরোজপুরের বলেশ্বর, রাজবাড়ির হড়াই, কুড়িগ্রামের ধরলা, গাইবান্ধার ঘাঘট, বান্দারবানের সাঙ্গু, খাগড়াছড়ির চেঙ্গী, নওগাঁর আত্রাজ এবং জামালপুরের ঝিনাই নদী।