পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন

11

আমাদের বাজারে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে নিয়ম-কানুন-যুক্তিরও কোনো বালাই নেই। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই যেকোনো পণ্যের দাম কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারেন। তেমনই ঘটনা ঘটেছে পেঁয়াজ নিয়ে। গত শুক্রবার ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ায়। শনিবার সকালেই দেশের সর্বত পাইকারি বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি শুরু হয়, বিকেল নাগাদ তা হয়ে যায় ৬৫ টাকা। অথচ ভারত থেকে নতুন দামে পেঁয়াজ আমদানি করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি শুধু অনৈতিক নয়, অপরাধও।
ভারতে এ বছর বন্যায় পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তারা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে রপ্তানি নিরুৎসাহ করার নীতি নিয়েছে এবং রপ্তানিমূল্য তিন গুণের বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তো শুধু ভারত থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করে না! মিয়ানমার, চীনসহ আরো অনেক দেশের পেঁয়াজই আসে বাংলাদেশে। ভারতে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা সেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দেবে। ভারতের ঘোষণা শুনেই কম দামে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেন এভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হবে? দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, হঠাৎ করে বাজার থেকে কোনো কোনো পণ্য গায়েব হয়ে যায় কিংবা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়, আবার দাম বেশি দিলে সব পণ্যই পাওয়া যায়। এতে দেশের সাধারণ ভোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর ফুলে-ফেঁপে ওঠে অনৈতিক ব্যবসাকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। বাজারের এমন দুর্বৃত্তায়ন রোধ করার দায়িত্ব সরকারের। বাস্তবতা হচ্ছে, বাজারের ওপর সরকারের কার্যকর কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। বাজারে হস্তক্ষেপ করার জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নামের একটি সংগঠন থাকলেও বাজারে সেই সংগঠনের প্রভাব নগণ্য। তাহলে এই বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উপায় কী? সাধারণ দরিদ্র ভোক্তাদের ওপর এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় ধরনের আঘাত। তাদের রক্ষার কোনো উদ্যোগ কি রাষ্ট্র নেবে না?
আমরা মনে করি, টিসিবির মাধ্যমে বিকল্প বাজার থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে এবং সেগুলো সাধারণ ভোক্তাদের নাগালে পৌঁছাতে হবে। পেঁয়াজ আমদানির শুল্ক কমিয়েও বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখা যেতে পারে। তবে এ সবই করতে হবে অতিদ্রুত। পাশাপাশি যারা অনৈতিকভাবে পেঁয়াজের মূল্য বাড়িয়ে দেবে কিংবা অযৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করবে, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।