হবিগঞ্জে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে ডাকাত সর্দার সোলেমান নিহত, ওসিসহ আহত ৩

10
চুনারুঘাটে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত ডাকাত সর্দার সোলেমান।

ছনি চৌধুরী হবিগঞ্জ থেকে :
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে পুলিশের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে সোলেমান মিয়া (৩০) নামে এক ডাকাত নিহত হয়েছে। সোমবার ভোর রাতে উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের ডেওয়াতলী কালিনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোলেমান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায় রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ডেওয়াতলী কালিনগর এলাকায় একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ডাকাতরা পুলিশের উপর আক্রমন চালায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুঁড়লে ডাকাত সোলেমান গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে ভোরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এ সময় তার অপর সঙ্গীরা পালিয়ে গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় ওসি নাজমুল হকসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আহত অবস্তায় তাদেরকে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. নাজমুল হক জানান, ডাকাতরা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে খবর পেয়ে আমরা অভিযান চালাই এসময় ডাকাতরা আমাদের উপর হামলা করে এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টাগুলি ছুড়লে এক ডাকাত আহত হয় পরে হাসপাতালে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এদিকে কমলগঞ্জ থেকে জানিয়েছেন : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আতঙ্কের এক নাম ছিল ডাকাত সর্দার সোলেমান (৩৫)। তার বাড়ি কমলগঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের কালীপুর গ্রামে। সাম্প্রতিক সময়ে সে কমলগঞ্জের আলীনগর চা বাগান, শমসেরনগর চা বাগান, কুলাউড়ার ভাটেরা বাজারে ডাকাতির নেতৃত্বে ছিল।
কমলগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, ডাকাত সর্দার সোলেমান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ আন্তজেলা ডাকাতদলের সাথে যুক্ত ছিলে। গত এক মাসে সে বহিরাগত ডাকাতদের এনে আলীনগর চা বাগানের দুটি বাসায়, শমসেরনগর চা বাগান ও কানিহাটি চা বাগানের দুটি বাসায় ডাকাতি করেছে।
গত ১৪ জুলাই রাতে ডাকাত সদস্যদের মুঠোফোন ট্রেক করে রাসেল আহমদ (২২) ও সেজু মিয়া (২৩) দুই ডাকাত সদস্যকে পুলিশ শমশেরনগর পশ্চিম বাজার এলাকা থেকে আটক করেছিল। আটককৃত দুই ডাকাতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছিল ঐ রাতে তারা শমসেরনগর ইউনিয়নের বড়চেগ গ্রামের আমদানি রপ্তানি কারক তাসদিক হোসেনের বাসায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দুই ডাকাতকে সে রাতে আটক করা হলেও বাকিরা পালিয়ে গিয়েছিল। সে জন্য সে রাতে পুলিশ সারারাত ব্যবসায়ীর বাড়ি পাহারা দিয়েছিল। সোলেমানের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় ৬টি মামলা রয়েছে।
১৪ জুলাই দুই ডাকাতকে আটকের পর রাসেল আহমদ নামের ডাকাতের বাড়ি থেকে ডাকাতির সময় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কারও উদ্ধার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে পালিয়ে থাকা অন্যান্য সদস্যদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাতে সে ফোনগুলি ট্রেক করা হয়। এমনিভাবে বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) সোলেমান ডাকাতের মুঠোফোন ট্রেক করে দেখা যায় সে সিলেট থেকে রওয়ানা দিয়ে শমশেরনগরের দিকে আসছে। সেজন্য বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সতর্কতা বাড়ানো হয়েছিল। তারা আরও বলেন, পুলিশ সতর্কতা বাড়ানোর ফলে সম্প্রতি ডাকাতদল শমসেরনগর প্রবেশ করতে পারেনি।
শমসেরনগরের ব্যবসায়ী তাসদিক হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ ব্যবসায়ীরা বলেন, গত দুই মাস ধরে কমলগঞ্জের সর্বমহলে ডাকাত সোলেমান আতঙ্ক কাজ করছিল। রোববার রাতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত সর্দার সোলেমানের মৃত্যুর খবর শুনে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শমসেরনগর ইউনিয়নের সদস্য ও মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, চা বাগানের সব ডাকাতিতে সোলেমান জড়িত ছিল। তার মৃত্যুতে এখন চা বাগানের মানুষের আতঙ্ক কিছুটা কমবে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত সর্দার সোলেমানের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাম্প্রতিক কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার ডাকাতির সব ঘটনায় সে জড়িত ছিল। তা নামে কমলগঞ্জে এক আতঙ্ক ছিল। এখন সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডাকাত সোলেমানের মরদেহ গ্রহনে তার পরিবার সদস্যরা হবিগঞ্জে গেছেন।