জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার ॥ মিন্নি হত্যা পরিকল্পনায় অংশ নেয়, মিটিংও করে

32

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতারের আগেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিন্নি এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার জানান, যারা হত্যাকারী ছিল তাদের সঙ্গে মিন্নি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় অংশ নেন। তিনি শুরু থেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের আগে এর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা দরকার, তার সবকিছুই তিনি করেছেন।
এসপি মারুফ হোসেন জানান, মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে হত্যা পরিকল্পনার মিটিংও করেছেন। মিন্নি স্বীকার করেছেন বলেই পুলিশ এই বিষয়গুলো আদালতের কাছে তুলে ধরে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিমান্ড আবেদন করেছে।
বরগুনা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, একাধিক আসামি আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আলোচিত এই মামলায় মঙ্গলবার রাতে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। এর আগে দিনভর তাকে পুলিশ লাইনসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার আদালতে হাজির করে মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদিন তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির গ্রেফতারের দাবিতে গত শনিবার রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রিফাতের বাবা। তিনি অভিযোগ করেন, এ হত্যার সঙ্গে মিন্নি জড়িত।
পরদিন সকালে বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ-এর ব্যানারে মানববন্ধনেও মিন্নির গ্রেফতার দাবি করা হয়। পরে দুপুরে মিন্নি তার বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, যারা বরগুনায় বন্ড ০০৭ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করিয়েছিলেন, তারা খুবই ক্ষমতাবান এবং অর্থবিত্তশালী। নেপথ্যের এই ক্ষমতাবানেরা বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকা ও এই হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার শ্বশুরকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।
গত ২৬ জুন বরগুনা সরকরি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় মিন্নিও পাশেই ছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রথম দিকে মিন্নি অনেকটা ভাবলেশহীন ছিলেন। পরে অবশ্য রিফাতকে যখন কোপানো শুরু করে সন্ত্রাসীরা তখন তিনি বাঁচানোর চেষ্টা করেন। শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে মিন্নির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত সাত আসামিসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।