রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হোক

22

নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ‘হামলা’র অভিযোগে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরু করেছিল মিয়ানমার। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল এ ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে আগেই বলেছে, এটি আসলে অজুহাত। কার্যত রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছে। একই ধরনের সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে। ‘মিয়ানমারে ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের রাত থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত ঘটনাবলি কাকতালীয় বা দুর্ঘটনা নয়। এমন মনে করার বিশ্বাসযোগ্য কারণ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যটির মুসলমান জনগোষ্ঠীসহ সবার কল্যাণার্থে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। এর কয়েক দিন পর আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) নামের একটি রোহিঙ্গা ‘জঙ্গিগোষ্ঠী’র হামলায় কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান চালায়। মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগে ৭০ জনের বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে যায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা। অনেক মানবাধিকার সংস্থা বলেছিল, ২০১৭ সালে আরো বড় বিপর্যয় ঘটবে—সে ইঙ্গিত ছিল ওই অভিযানে।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনান কমিশন বলেছিল, রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা নয়, বরং সঙ্গে নিয়ে চলাই রাখাইন রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সর্বোত্তম পথ। মিয়ানমার সরকারের বেসামরিক অংশ ওই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছিল। সু চি বলেছিলেন, পরিস্থিতির নিরিখে যত দ্রুত সম্ভব সুপারিশমালা পুরোপুরি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন তিনি। মন্ত্রী পর্যায়ের একটি কমিটিকে দায়িত্বও দেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধরা এর বিরোধিতা করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনান কমিশনের সুপারিশমালা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের পর রাখাইনে সংঘটিত ঘটনাবলি দুর্ঘটনা ছিল না। ‘আরসার হামলা’র কথা বলে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে পরিকল্পিত নির্যাতন-নিপীড়ন চালায় জাতিসংঘ তাকে ‘আক্ষরিক অর্থেই জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ও ‘গণহত্যা’ অভিহিত করে। শত শত রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্তত সাত হাজার হত্যা, ধর্ষণ ও লুটের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে মিয়ানমার বাহিনীর বিষয়ে এত দিন ধরে বিভিন্ন মহল যেসব অভিযোগ করছে তার প্রতিফলন ঘটেছে। মিয়ানমার সরকার আনান কমিশনের প্রতিবেদন ও সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের নিরিখে সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেবে এটাই প্রত্যাশা।