আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর

129

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শেষ হলো মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা। এখন অপেক্ষা শুধু আকাশে এক ফালি চাঁদ দেখার। আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে দেশবাসী মজবে ঈদ আনন্দে। ঘুচে যাবে ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ ব্যবধান। সমস্বরে সবাই বলবে ‘ঈদ মোবারক’। ঈদের খুশি ভাষায় প্রকাশ করতে তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক/ দোস্ত দুশমন পর ও আপন/সবার মহল আজি হউক রওনক/যে আছ দূরে যে আছ কাছে/সবারে আজ মোর সালাম পৌঁছে/সবারে জানাই এ দিল্আশক। এদিকে ঈদ-উল ফিতরের তারিখ নির্ধারণে আজ সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
রমজান মাস শেষে ঈদ উৎসবে মাতোয়ারা এখন সারাদেশ। ঈদ আনন্দে শরিক হতে যে যার সাধ্যমতো কেনাকাটাও করেছেন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে লাখো মানুষ। পথে পথেও তাই বইছে ঈদের খুশি। প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত, কুশল বিনিময়, পারস্পরিক সহমর্মিতা প্রকাশে ঘরে ফেরার ভোগান্তি মুহূর্তেই ভুলিয়ে দিচ্ছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ঈদ নিয়ে আরও লিখেছেন, ‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরণী বেহেশতী, দুশমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তী, জাকাত দেবো ভোগ-বিলাস, আজ গোস্বা বদমস্তি, প্রাণের তশতরীতে ভরে বিলাব তৌহিদ। চলো ঈদগাহে।’
আজ অথবা কাল শেষ হচ্ছে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা। এরপরই পালিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে ইতোমধ্যে শুরু করেছে ঈদের আনন্দ। চান্দ্রমাসের হিসাব অনুযায়ী আজ শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে কাল বুধবার উৎযাপিত হবে ঈদ-উল-ফিতর। আর চাঁদ দেখা না গেলে আগামী বৃহস্পতিবার পালিত হবে ঈদ। চাঁদ দেখা ও ঈদ-উল-ফিতরের তারিখ নির্ধারণের জন্য আজ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। আজ মাগরিব নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদের সভাকক্ষে চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক বসবে।
ইসলামী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উৎসব মুসলমান জাতির প্রতি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বিরাট নিয়ামত ও পুরস্কার। মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সদস্যের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা, মমতা ঈদের এ পবিত্র ও অনাবিল আনন্দ উৎসবে একাকার হয়ে যায়। তারা জানান, ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধুমাত্র আনন্দ-উৎসবই নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদত যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়। ধনী-গরিব, সাদা-কালো, ছোট-বড়, দেশী বিদেশী সবাই ভেদাভেদ ভুলে যায়। সব শ্রেণী ও সব বয়সের নারী-পুরুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান আল্লাহ্র শুকর আদায়ে নুয়ে পড়ে।
তারা বলেন, ঈদ-উল-ফিতরের দিনে খুশি প্রকাশ করা মুসলমানের জন্য মুস্তাহাব। মাহে রমজানের প্রথম দশদিন রহমত, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাত, তৃতীয় দশদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির পুরস্কারস্বরূপ সৌভাগ্যের ঈদ উদযাপনের সুযোগ মহান আল্লাহতাআলা তার বান্দার জন্য দিয়েছেন। মাহে রমজান সমাপ্তির পর মহান আল্লাহ ঈদ-উল-ফিতরের নেয়ামত দ্বারা বান্দাকে ধন্য করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত যখন ঈদ-উল-ফিতরের রাত আসে তখন সেটাকে লাইলাতুল জায়েজা অর্থাৎ পুরস্কারের রাত বলে আহ্বান করা হয়। যখন ঈদের দিন ভোর হয় তখন আল্লাহ্ তায়ালার ফেরেস্তারা সব শহরে, সব অলিগলি ও রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালাও তাঁর বান্দাদের এভাবে সম্বোধন করেন, হে আমার বান্দারা! চাও, কি চাইতে ইচ্ছে হয়! আমার সম্মান ও মহত্ত্বের শপথ! আজকের দিনে এ জমায়েতে (ঈদের নামাজে) তোমাদের আখিরাত সম্পর্কে যা কিছু চাইবে তা পূরণ করব। আর যা কিছু দুনিয়া সম্পর্কে চাইবে তাতে তোমাদের মঙ্গলের দিক দেখব। আমার সম্মানের শপথ! তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বিধানবলীর প্রতি যত্মবান থাকবে আমিও তোমাদের ভুলত্রুটিগুলো গোপন রাখব। আমার সম্মান ও মহত্ত্বের শপথ আমি তোমাদের সীমালঙ্ঘনকারীদের সঙ্গে অপমানিত করব না। তোমাদের ঘরের দিকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হিসেবে ফিরে যাও। তোমরা আমাকে সন্তষ্ট করে। আমিও তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছি।
ঈদ-উল-ফিতর (আরবী অর্থ রোজা ভাঙ্গার দিন) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। ধর্মীয় পরিভাষায় ঈদ-উল ফিতরকে পুরস্কার দিবস হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর বিশ্বের মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্য পালনসহ খুব আনন্দের সঙ্গে পালন করে থাকে। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ধনী-গরিব, ছোট বড়, আশরাফ-আতরাফ সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায় ঈদ। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনেও আবদ্ধ করে।
এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এইচএম এরশাদ। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিত ও সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিস্তারিত কর্মসূচী নেয়া হয়েছে।
চাঁদ দেখা কমিটির সভা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ১৪৪০ হিজরীর পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভা বসবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ। দেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা নিম্নোক্ত টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিজি) অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। টেলিফোন নম্বর : ৯৫৫৯৪৯৩, ৯৫৫৯৬৪৩, ৯৫৫৫৯৪৭, ৯৫৫৬৪০৭ ও ৯৫৫৮৩৩৭। ফ্যাক্স নম্বর : ৯৫৬৩৩৯৭ ও ৯৫৫৫৯৫১।
ঈদের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা : পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিন রাজধানীসহ সারাদেশে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দীর্ঘ সিয়াম সাধনায় বৃষ্টির দেখা না পেলেও জুনের শুরুতেই সারাদেশে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, সাগরে পশ্চিমা লঘুচাপ ও পূবালী বাতাসের সংমিশ্রণে সারাদেশে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে জুনের প্রথম থেকেই। বিভিন্ন এলাকায় এর প্রভাবে ঝড়োহাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তিনি জানান, ৫ জুন ঈদের দিন সারাদেশেই বৃষ্টি হবে। বিশেষ করে ওদিন ঢাকা বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে জুন থেকেই বৃষ্টি হওয়ায় শেষ মুহূর্তে রোজায় স্বস্তি মিলেছে। ঈদযাত্রাও অনেকটাই আরামদায়ক হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানায় আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে গরমের অনুভূতি কমবে। এবারে রোজার শুরুতেই প্রচন্ড দাবদাহ উপেক্ষা করেই রোজাব্রত পালন করতে হয়েছে রোজাদারদের। তবে শেষ মুহূর্তে বৃষ্টি তাদের মনে কিছুটা হলে স্বস্তি এনে দেয়। এছাড়া ঈদের দিন বৃষ্টি হলে ঈদ উদযাপন অনেকটা আরামদায়ক হবে। আবহাওয় অফিস জানিয়েছে এবার জুনের প্রথমে মৌসুমি বায়ু দেশের মধ্যে প্রবেশের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মৌসুমি বায়ু গতি না থাকায় এটি এখনো দেশের উপকূলে আসেনি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা উপকূলে পৌঁছবে। মৌসুমি বাতাস দেশে ঢুকলে তখন পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হবে।