সেই মেহগনি গাছ ফিরিয়ে দিলেন শিক্ষক!

171
বিশ্বনাথে ফিরিয়ে দেয়া মেহগনি গাছ (বামে) ও রোপণ করা বাঁশে বাঁধা নারিকেল গাছ (ডানে)।

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
বিশ্বনাথে রাতের আঁধারে নারিকেল গাছে পরিনত হওয়া স্কুল প্রাঙ্গণের সেই মেহগনি গাছ ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মো: শাহ আলম। চুরি করে রাতের আঁধারে কেটে সরিয়ে রাখা ওই মেহগনি গাছের তিনটি পিছ এখন রামধানা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। গাছ ফিরিয়ে দেওয়ার পর ম্যানেজিং কমিটির ডাকা এক বৈঠকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশও করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক। আর তাতে ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সকলেই সন্তুষ্ট হওয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ঝড়ে পড়ে যাওয়ায় সেই নারিকেল গাছটিকেও বাঁশ বেঁধে শক্ত করে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ৫ মে রবিবার ভোরে কৌশলে লাখ টাকার মেহগনি গাছটি কেটে মূল পর্যন্ত উপড়ে ফেলে মেহগনির গোড়ায় ৩/৪ ফুটের একটি নারিকেল গাছ রোপন করে রাখা হয়। এ ঘটনায় গ্রামবাসী, ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষক সমন্বয়ে কয়েক দফা বৈঠকসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি মিলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হলেও দীর্ঘ ১০ দিনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দীর্ঘদিন থেকে অলংকারী ইউনয়িনের রামধানা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নামাজের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এনিয়ে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। গ্রামবাসীর পক্ষে গাছ কাটার বিরুদ্ধে রয়েছেন রামধানা গ্রামের প্রাক্তন মেম্বার জুনাব আলী। আর অন্য পক্ষে রয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামালপুর গ্রামের সালেহ আহমদ তোতা ও প্রধান শিক্ষক শাহ আলম। সর্বশেষ গত ১০ মে শুক্রবার রাতে সালেহ আহমদ তোতার সভাপতিত্বে স্কুল মিলনায়তনে ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবসীর আয়োজনে বৈঠকে প্রধান শিক্ষক দুঃখ প্রকাশ করেন। আর এতে সকলের সন্তুষ্টির মাধ্যমে মেহগনি গাছ সরানোর কাহিনীর ইতি টানা হয়।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সালেহ আহমদ তোতা এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রবীণ মুরব্বী আব্দুল ওয়াদুদ বিএসসি, ইউপি সদস্য রাজুক মিয়া রাজ্জাক, আসাব আলী, আব্দুল হেকিম, হোসাইন আহমদ, হাজী আবুল কালাম, ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, ঝুনু মিয়া, লিয়াকত আলী, খালেদ আহমদ বাদশাসহ রামধানা ও কামালপুর গ্রামের সচেতন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।
রামধানা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: শাহ আলম দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি মূলত চুরির উদ্দেশ্যে সরানো হয়নি, নিজের নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। আর নারিকেল গাছ লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, স্কুলের পরিবেশ রক্ষা ও ফলদ বৃক্ষ হিসেবে তিনি এটা লাগিয়েছেন।
গাছ কেটে দুঃখ প্রকাশ করলেই বিষয়টি শেষ হয়না দাবি করে রামধানার প্রাক্তন মেম্বার জুনাব আলী বলেন, আইনীভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার জন্যে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গাছ কাটার বিষয়ে কোন অভিযোগ পাননি জানিয়ে এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা-তুজ-জোহরা এ প্রতিবেদককে বলেন, স্কুলে মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন তিনি পেয়েছেন। আর গাছ কাটার বিষয়ে গত আইন শৃংখলা বিষয়ক সভায় উঠেছে বিধায় তিনি জেনেছেন। তদন্তের মাধ্যমে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।