জনবল সংকটে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তবুও বাড়ছে সেবার মান

47

নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
জনবল সংকট ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত উপকরণের সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান থাকার পরও দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বেড়েছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার মঞ্জুরীকৃত সকল জনবল ও অবকাঠামোগত আনুষঙ্গিক উপকরণ সুবিধার প্রাপ্তি এবং যথাযথ ব্যবহার করা গেলে উপজেলা পর্যায় থেকেই অত্যাধুনিক সেবা প্রদান করা যেত, এমনটাই বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ৭১লাখ টাকার বেশি। এই নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এবং জনবল সংকট নিরসন হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পরিপূর্ণ সেবাদানে সক্ষম হবে।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরীর নিবিড় তত্ত্বাবধানে আগত রোগীদের প্রদত্ত সেবার মান বেড়েছে। কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিভাগ সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো গুছানো, পরিচ্ছন্ন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিপাটি রাখার কাজটি সবাই সম্মিলিত উদ্যোগে করে থাকেন বলে ডা. মনিসর চৌধুরী জানান। রোগীর থাকার ওয়ার্ডসমূহ, শৌচাগার, সার্বক্ষণিক ধুয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন রাখা হয়, খাবারের মানও সন্তোষজনক।
ডা. মনিসর চৌধুরী আরো জানান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ শূন্য থাকায় আমরা স্থানীয়ভাবে লোক নিয়োগ করে কাজ চালিয়ে আসছি। কমপ্লেক্স পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এদের ব্যয় বাবদ কিছু টাকা সরকারি বরাদ্দ থেকে এবং কিছু টাকা কর্মকর্তারা নিজেরাই চাঁদা তুলে নির্বাহ করে থাকি। অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেই আমাদেরকে চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়ন প্রচেষ্টা করতে হচ্ছে।
ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে থাকার পরিবেশ ও খাবারের মান সন্তোষজনক। তবে ডাক্তারের দেওয়া বিভিন্ন রোগের টেস্ট বাইরের ল্যাব থেকে করে নিতে হয়। অনেক ঔষধ বাইরে থেকে আনতে হয়। কারণ রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রী হাসপাতালে নেই। তবে ডাক্তার ও নার্সরা আন্তরিক।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচ তলার ফ্লোরে রয়েছে ফুলের টবে সাজানো অভ্যর্থনা কক্ষ ও ইপিআই সেবাদান কেন্দ্র। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) শৈলেন্দ্র দেবনাথ জানান, নিয়মিত টিকাদানের মাধ্যমে শিশু এবং মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর জন্য সারা উপজেলায় ইপিআই বিভাগের ১টি স্থায়ী কেন্দ্র এবং ১২০টি অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। এতে নির্ধারিত রোগে অনাকাক্সিক্ষত মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু রোধে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। উপর তলায় রোগীদের ওয়ার্ড সংলগ্ন প্রসূতি সেবা কক্ষের দায়িত্বে আছেন সিনিয়র স্টাফনার্স নির্লিপ্ততা রাণী হালদার। তিনি জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য থাকায় প্যাথলজিক্যাল কাজটি ব্যাহত হচ্ছে। ডেলিভারি সংক্রান্ত পর্যাপ্ত উপকরণ সামগ্রী ও প্রসবকালীন প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা থাকলে এখানেই জটিল প্রসবের কাজটিও নিরাপদে করা যেত এবং সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তিও কমে যেত।
কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত কোর টিমের সদস্য শৈলেন্দ্র দেবনাথ জানান, গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও সিএইচসিপিদের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারির কাজটি করা হয়। জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সহায়ক অনেক লোকবল পদ শূন্য রয়েছে। যে কারণে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী জানান, শুধু এই উপজেলা কমপ্লেক্সেই বিভিন্ন শূন্য পদে দীর্ঘ দিন যাবৎ নিয়োগ না থাকায় সেবা কার্যে ব্যাহত হচ্ছে। শূন্য পদের মধ্যে আছে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ১জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিয়া) ১ জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১ জন, ডেন্টাল সার্জন ১ জন, নার্সিং সুপারভাইজার ১ জন, সিনিয়র স্টাফনার্স (মিডওয়াইফ) ৪জন, সিনিয়র স্টাফনার্স ১জন, সহকারি নার্স ১জন, পরিসংখ্যানবিদ ১জন, স্টোরকিপার ১জন, অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক ২ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফার্মাসিস্ট) ২জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) ২জন, স্বাস্থ্য সহকারি ৭জন, অফিস সহায়ক ৩ জন, গাড়ি চালক, জুনিয়র ম্যাকানিক, ল্যাব এটেনডেন্ট, ওয়ার্ড বয়, আয়া, মালি, কুক/মশালচী, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, না থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এসব শূন্য পদ পূরণ করা গেলে ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক অত্যাধুনিক উপকরণ সংযোজন করা হলে উন্নত সেবা প্রদান উপজেলাতেই সম্ভব। এতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবার আশায় স্থানীয় লোকজনের দূরবর্তী মেডিকেল কেন্দ্রে যাওয়ার ভোগান্তি কমে যেত এবং চিকিৎসা ব্যয় সাশ্রয় হতো।
লোকবল সংকট নিরসন ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত উপকরণ সংযোজন বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাসের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।