পুলিশী নির্যাতনে যুবক হত্যার ঘটনা ॥ বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরসহ ৪ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত, ৩ জন প্রত্যাহার, স্ত্রীর মামলা দায়ের

23

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন আহমদ নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশী নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী থানার আওতাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ বহুল বিতর্কিত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে আরও ৩ পুলিশ সদস্যকে। গতকাল সোমবার বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অন্য পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস আর প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন, এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।
গত রবিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটের সময় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রায়হান উদ্দিন আহমদ (৩৪) নামের এক যুবককে গুরুতর আহতাবস্থায় ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতের নখও উপড়ানো ছিল। রায়হান উদ্দিন নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র। তার ৩ মাসের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন রায়হান।
রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সে ছিনতাইকারী ছিল। তার বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাই মামলা রয়েছে। নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার পরিবার পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করে ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ তুলেন। এরপর পুলিশও আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের আশ^াস দেয়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এদিকে, রবিবার রাত আড়াই টার দিকে নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার স্বামীকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে ১০ হাজার টাকা দাবি ও দাবিকৃত টাকা না পেয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ করেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, কে বা কারা রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে হত্যা করেছেন। এজাহারে রায়হান বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে যে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সেই নম্বরটিও উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিনের মতো গত শনিবার ১০ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে তার স্বামী রায়হান উদ্দিন আহমদ নিজ কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে যান। পরদিন ১১ অক্টোবর ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে ০১৭৮৩৫৬১১১১ মোবাইল নাম্বার থেকে শাশুড়ি (রায়হানের মা সালমা বেগম)-এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার (০১৭৮৭৫৭০৯৪৯)-এ কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ। এসময় রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে। এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে। আর যে পুলিশ রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এ সময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ সদস্য।
এসএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম জানান, বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রায়হানের পরিবারের পক্ষ হতে অভিযোগ আসার পর থেকেই একটি ফোন কল নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা ও রহস্যের। সেই রহস্য গতকাল সোমবার অবশেষে উদঘাটন হয়েছে। নাম্বারটি সেই রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্তব্যরত কনস্টেবল তৌহিদ মিয়ার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম।