আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা ॥ আবার ক্ষমতায় আসলে সিলেটের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে

129
আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে নর্বিাচনী জনসভায় শখে হাসনিা ॥ আবার ক্ষমতায় আসলে সলিটেরে চলমান উন্নয়নরে ধারা অব্যাহত থাকবে
হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করে মোনাজাত করছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। উন্নয়নের জোয়ার সিলেট বিভাগে এসেছে। আবার ক্ষমতায় আসলে সিলেটের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের কল্যাণ হয়। আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই জনগণের অধিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাই নৌকা মানেই উন্নয়ন, ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ।
গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা ৪ মিনিট থেকে ৪টা ৩৮ মিনিট আধা ঘন্টারও বেশি আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে আওয়ামীলীগ আয়োজিত নির্বাচন জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরিচালনায় আয়োজিত জনসভায় এ সময় বক্তব্য রাখেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গির কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাহাউদ্দিন নাসিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সিলেট-১ আসনের প্রার্থী ড. এ.কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-২ আসনের প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী, সিলেট-৪ আসনের ইমরান আহমদ, সিলেট-৫ আসনের হাফিজ আহমদ মজুমদার, সিলেট-৬ আসনের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমন, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজারের সাধারণ সম্পাদক মেসবাউর রহমান, যুবলীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা আবু কায়সার, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী, যুব মহিলা লীগ নেত্রী নাজমা রহমান ও সিলেট মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী সৈয়দা জেবুন্নেচ্ছা হক। এছাড়াও জনসভায় সিলেট বিভাগের মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীরাও বক্তব্য রাখেন।
আলীয়া মাঠে জনসভাস্থলে শেখ হাসিনার গাড়িবহর পৌঁছামাত্র তাঁকে নিয়ে গান ধরেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ‘নৌকা চলিল চলিল সঙ্গে জনগণ নৌকা চলিল-রে’ গানের সুরে সুরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান কামরান। এসময় মাঠে উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘নৌকা নৌকা’ শ্লোগানে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে জনসভায় শেখ হাসিনা আরো বলেন, জানুয়ারিতে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলাম। আবারও আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সামনে এসেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়ে আজ আমরা স্বাধীন। তাই দেশকে জাতীয় পিতার স্বপ্নের মতো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আগামী নির্বাচনে আমরা যে প্রার্থী দিয়েছি, তাদের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
তিনি বলেন, নৌকা হচ্ছে মানুষের বিপদের বন্ধু, নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছিলো, নৌকার কারণে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি। নৌকায় ভোট দেয়ার কারণে দেশে উন্নয়ন হয়েছে। আগে বিদেশে গেলে ভিক্ষা চাওয়ার দেশ হিসেবে আমাদের চিনতো, এখন তারাই

সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী জনসভায় সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের আওয়ামীলীগ ও মহাজোট প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বলে বাংলাদেশ মানেই উন্নয়ন। এখন প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে। আমরা উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলো, আমি চ্যালেঞ্জ করেছি, বলেছি আমি নিজের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করি না, আমি দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করি। পরে তা প্রমাণ হয়েছে। পরে বলেছি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা লাগবে না। আমাদের এই একটি সিদ্ধান্ত আমাদেরকে বিশ্বের কাছে মর্যাদা প্রদান করেছে। এসময় তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত উন্নয়নে বিশ্বাস করেনা। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এমএস কিবরিয়াকে হত্যা করা হলো। সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশকে দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে, জঙ্গিবাদি দেশ হিসেবে, সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। দেশের মানুষের মানইজ্জত সব শেষ করে দিয়েছে। তাদের অরাজকতার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। তারা মানুষ পুড়ানো, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতি করা ছাড়া আর কিছু জানে না। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছিল। খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিরাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে আমি বা আওয়ামী লীগ মামলা দেয়নি। সেই মামলা ১০ বছর ধরে চলে শাস্তি দেয়া হয়েছে। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্পিন্টার নিয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে। এখন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান লন্ডন বসে বসে দেশের ষড়যন্ত্র করছে।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, সিলেটের সকল জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করন প্রকল্প অনুমোদন, হাইটেক পার্ক, ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করণ, সিলেটের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নদী ড্রেজিং ও হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। সিলেটের ৪ জেলার সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সিলেট বিভাগের সব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। হাওর-বাওর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার প্যানেল করে দিয়েছি যাতে মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যায়। তিনি বলেন, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। প্রবাসী যারা আছেন, তারাও বিনিয়োগ করতে পারবেন। সকলের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছি, যেখানে কর্মসংস্থান হবে।
সিলেটের উন্নয়নে ইতিমধ্যে জানুয়ারিতে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। এছাড়াও সিলেটের ৪ জেলার উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেছেন, আগে চায়ের নিলাম শুধুমাত্র চট্টগগ্রামে হতো। আমরা সেই নিলাম সিলেটে যাতে হয়, তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকায় ভোট দেয়। তাদেরকে ধন্যবাদ। তাদের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কাজ করেছি। চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করেছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। মা বোনেরা এখন বাড়ির পাশে চিকিৎসা নিতে পারেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার কমে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ ভাগে উন্নীত করেছি। আমরা সকলের জন্য বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। মায়ের মোবাইল ফোনে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেই। সারাদেশে ইন্টারনেট চালু করেছি। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে। মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সবাই এখন বিশ্বকে দেখতে পারে, আত্মীয়স্বজনকে দেখতে পারে। মোবাইল ফোনে আমরা টু জি থেকে থ্রিজি, থ্রিজি থেকে ফোরজিতে চলে এসেছি। আগামীতে আমরা ফাইভ জি চালু করবো।
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদী ভাঙন ঠেকাতে, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। সিলেট বিভাগের সকল জেলায় সার্বিক উন্নয়নে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। আবার ক্ষমতায় এলে তা বাস্তবায়ন হবে। দারিদ্র বলে কিছু থাকবে না। মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবে।
নৌকা হচ্ছে মানুষের বিপদের বন্ধু’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নুহ নবীর আমলে মহাপ্লাবন থেকে মানুষ জাতিকে রক্ষা করেছিল নৌকা। নৌকা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়েছি। নৌকা দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালবো, কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। এই নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট বাঙালি জাতির মানসম্মান ভুলুণ্ঠিত করেছিল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হত্যা, দুর্নীতি এগুলো ছিল তাদের নীতি। নির্বাচনে তারা একেক আসনে ৪-৫ জনকে নমিনেশন দিয়েছে। পরে অকশনে দিয়েছে। যে বেশি টাকা দিয়েছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগদান করায় তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। লন্ডনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হবে বলেও মন্তব্য করে তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে, তা ধরে রাখতে হবে। যে সম্মান বিশ্বে পায়, তার জন্য নৌকায় ভোট দিতে হবে। আমি নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে এসেছি। শুধু নৌকা প্রতীক নয়, আমরা মহাজোটের সকল প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে এসেছি।
জনসভায় সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মহাজোটের সকল প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা প্রতীক বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। রজতজয়ন্তী পালন করা হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ দেশ। ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশেকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এর আগে শনিবার নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে সিলেট আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) ও সিলেটের প্রথম মুসলিম গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার জিয়ারত করেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা মাজার জিয়ারত শেষে জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের জন্য নগরীর সার্কিট হাউজে অবস্থান শেষে বেলা ৩ টা ১২ মিনিটে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভা স্থলে পৌঁছান। এদিকে শনিবার সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মিছিলে মিছিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে জড়ো হন আলিয়ার মাঠে। সময় বাড়ার সাথে সাথে ক্রমেই এক জনসমুদ্রে পরিণত হয় আলিয়া মাদরাসার মাঠ।
জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সিলেটের ১৯টি আসন শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে হবে।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাস, ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত সিলেট তথা বাংলাদেশ গড়তে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে হবে। সিলেটের উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চান।
জনসভায় সিলেট-১ আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থী ড.এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, শেখ হাসিনা গরীবের বন্ধু। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। তিনি তার বক্তন্যে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১০ বছরে অভুতপূর্ব উন্নয়ন করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, যেভাবে সাহস যোগাচ্ছেন তাতে অচিরেই বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ইশতেহারে ঘোষিত ২০৬১ সালের ভিতরেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, এখন আর কোন মানুষ আতংকিত নয়। শেখ হাসিনা দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছেন।
শেখ হাসিনা দেশে প্রযুক্তির বিকাশ, মেধার বিকাশ ঘটিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের মেধাবীরা অনশগ্রহণ করছে, পুরস্কার পাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে নারী জাগরনের হাতিয়ার উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার কৃষি বান্ধব সরকার, উন্নয়ন বান্ধব সরকার। সিলেটের উন্নয়নে গ্যাস সমস্যা সমাধান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, উন্নত সিলেট, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আইটিপার্ক সহ উন্নত সিলেট গড়ার লক্ষ্যে আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়ী করার আহবান জানান।
সিলেট-২ আসনের জাতীয় পার্টির ও আওয়ামীলীগ মহাজোটের প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর আবারও লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করুন।
সিলেট-৩ আসনের আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন।
সিলেট-৪ আসনের বর্তমান এমপি এবং আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মনোনীত প্রার্থী ইমরান আহমদ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমার উপর আস্থা রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বারবার মনোনয়ন প্রদান করেছেন। আমার উপর এমন আস্থা রাখার জন্য আমি শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারাই আমাকে ৫বার জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছেন। আপনাদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনেও আপনারা আমাকে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করবেন।
সিলেট-৫ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, বিশ্বের অনেকগুলো দেশ থেকে আমরা সৌভাগ্যবান। আমাদের দেশ এবং আমরা ভাগ্যবান কারণ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তিনি বলেন, শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিলো সোনার বাংলা গড়া কিন্তু ঘাতকেরা তা হতে দেয়নি। তবে আমরা সৌভাগ্যবান যে আমরা শেখ মুজিবের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। তার নেতৃত্বে উন্নয়ন দেশে ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তিনি কৃষি উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছি। সিলেট-৫ আসনের জকিগঞ্জ-কানাইঘাটবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের অনুরোধেই আপনাদের কথা চিন্তা করেই এই বৃদ্ধ বয়সেই আমাকে আবারো নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনে আপনারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিবেন।
সিলেট-৬ আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থী বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বিগত ১০ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব সারাদেশে ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তিনি সিলেটেও সর্বক্ষেত্রে ব্যপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন হলো উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষয় দুর্নিতিবাজদের বিপক্ষের নির্বাচন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। সিলেটবাসী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একসময় শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেট পিছিয়ে ছিলো, কিন্তু এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষাক্ষেত্রেও সিলেট এগিয়ে গেছে। সবশেষে তিনি সিলেটবাসীকে ৩০ তারিখের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে আহবান জানান।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস, পেট্রোল বোমা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছিল। আগামী নির্বাচনে তাই বিএনপি-জামায়াতকে সিলেটের ১৯টি আসনে প্রতিহত করতে হবে।
জনসভায় দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ৩০ তারিখ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উন্নয়ন না বিএনপি জামাতের জংঙ্গিবাদ। উন্নয়ন শান্তি চাইলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। মির্জা ফখরুলের কান্না নিয়ে তিনি বলেন, যারা দন্ডপ্রাপ্ত তাদের জন্য কাঁদছেন কিন্ত আপনি ভুলে গেছেন, আপনার নেতৃত্বে এদেশে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছেন, তাদের স্বজনরা যখন কেঁদেছিল তখন আপনার চোখের কান্না কোথায় ছিলো। মানুষ তাই আপনাদের প্রত্যাখ্যান করে নৌকায় ভোট দিবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সিলেট থেকে বাংলা ভাইর উত্তান হয়েছিল, আমরা সিলেট থেকে জঙ্গি নির্মূল করেছি। খালেদা তারেক দেশকে ধ্বংস করেছেন, হাসিনা টেনে তুলেছেন, তাই ৩০ ডিসেম্বর নৌকায় ভোট দিন।
বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার নেতৃত্বে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি তাকে স্মরণ করে আমি বক্তব্য শুরু করছি। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে এই সিলেট থেকেই মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আপনারা আমাকে জয়ী করেছিলেন। পরে শেখ হাসিনা আমাকে তার সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ফলে দেশে এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে৷ এজন্য আপনারা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে উন্নয়নের স্বার্থে শেখ হাসিনার নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করুন। তিনি আরো বলেন, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আগামীতে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে। শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী হবেন।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার। প্রথমত, মোমেন সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী, দ্বিতীয়ত তিনি আমার কনিষ্ট ভাই। তৃতীয়ত: দীর্ঘদিন সে বিদেশে থাকলেও দেশের সবকিছুতে অংশগ্রহণ করছে৷ বাইরে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করেছে। গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে। সে অনেক আগে থেকেই এই দলের জন্য কাজ করে আসছে। গত প্রায় ৩ বছর ধরে সে সিলেটের মাঠে আওয়ামী লীগের হয়ে সিলেটের উন্নয়নে কাজ করছে। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি এবারে সিলেট-১ আসনে আমার জায়গায় তাকে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করে জনগনের সেবা করার সুযোগ দিবেন।