কানাইঘাটে কিশোর নিহতের ঘটনায় বিজিবির তদন্ত শুরু, জনমনে আতংক

31

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
গত ২১ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৭টায় কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির সীমান্তবর্তী সোনাতন পুঞ্জি গ্রামে ভারতীয় সিগারেটের চালান আটকের সৃষ্ট ঘটনায় বিজিবির গুলিতে নিরাপরাধ কিশোর সিরাজ উদ্দিন নিহত হওয়ার পর থেকে এলাকায় জনমনে বর্তমানে আত্মঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় এলাই বিজিবি তদন্তে নেমেছে। জানা যায় সীমান্তবর্তী ১৩১৪ মেইন পিলারের পাশে ভারতীয় সিগারেট আটক নিয়ে সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্পের জোয়ানদের সাথে চোরাকারবারীদের সংঘর্ষ হলে বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে প্রথমে ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে চোরাকারাবারিদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান পরে আটককৃত সিগারেট ক্যাম্পে নিয়ে আসার পথে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে সোনাতন পুঞ্জি গ্রামের নূর হোসেনের বাড়ীর পাশে অবস্থিত একটি ছোট কালভার্ট পারাপারের সময় বিজিবির একটি চলন্ত মোটর সাইকেল কালভার্টের নীচে ছিটকে পড়লে ৩ বিজিবি সদস্য আহত হন। এ সময় আশপাশ বাড়ীর মহিলারা দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখে শোর চিৎকার শুরু করলে বিজিবি সেখানে আরো ৭ রাউন্ড এলোপাতাড়ী গুলি ছুঁড়তে থাকলে পথচারী সোনাতন পুঞ্জি গ্রামের আব্দুল মুতলিবের কিশোর পুত্র সিরাজ উদ্দিন বিজিবির গুলিতে মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে পার্শ্ববর্তী আব্দুল হকের বাড়ীর উঠানে ঢলে পড়ে মৃত্যু হয়।
জানা যায় সে ঐদিন সুরইঘাট বাজার থেকে কাঁচাবাজারের খরছ করে বাড়ীতে ফির ছিল। সরেজমিনে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে সৃষ্ট ঘটনায় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্তে নেমেছেন। পাশাপাশি এলাইবিজিবি গত সোমবার সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যদের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের বক্তব্য নেন বলে জানা গেছে। ভারতীয় সিগারেট আটক নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় সুরইঘাট ক্যাম্পের সুবেদার মোঃ সুরত আলী বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮০/১০০ জন লোককে আসামী করে কানাইঘাট থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং- ১৬ ও ১৭, তাং- ২১/০১/২০১৯ইং। এ দু’টি মামলায় সীমান্তের ১৩১৪নং মেইন পিলারের পাশে ভারতীয় সিগারেট আটকের সময় বিজিবির উপর সরাসরি হামলাকারী কয়েকজন কে আসামী না করে ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন কয়েকজন কে মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ দু’টি মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকার নিরীহ লোকজন গ্রেফতার আতঙ্কে ভোগছেন। ভয়ে অনেকে প্রকৃত ঘটনা ও আড়াল করছেন। তারা সেদিনের প্রকৃত ঘটনার কথা খোলা মনে আইন শৃংখলা বাহিনী ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলতে সাহস পাচ্ছে না, যদি পরবর্তীতে তাদের মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। কারন তাদের অনেককে মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা গত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বললে বিজিবির মামলার ভয়ে প্রথমে অনেকে মুখ খুলতে চাননি। এ সময় বাউরভাগ ৪র্থ খন্ড গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র স্থানীয় সুরইঘাট বাজার লেসি নুর আলম, সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের আব্দুর রহিম, আব্দুল আজিজ, আব্দুন নুর সহ বেশ কিছু লোকজন জানান বিজিবির দায়েরকৃত পৃথক দু’টি মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ঐ দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। এদের মধ্যে মৃত ফয়জুল হকের পুত্র জাকারিয়া ভিজিট ভিসায় ভারতে ছিলেন। এছাড়াও বিজিবির দায়েরকৃত মামলায় ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন তিন চার জন নিরীহ লোকদেরকে ও আসামী করা হয়েছে। যারা এ ঘটনার সাথে আদৌ জড়িত ছিল না বলে তারা দাবী করেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান এলাকার বিভিন্ন কোন্দলের কারনে একটি মহল তাদের ফায়দা হাসিলের জন্য বিজিবিকে ভুল বুঝিয়ে নিরীহ মানুষকে আসামী করিয়েছে এবং ঐ মহলটি এখনও কথায় কথায় তাদেরকে বিজিবির মামলার ভয় দেখাচ্ছে। তারা অবিলম্বে সে দিনকার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করে ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন নিরীহ লোকজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানান। তবে এলাকার অনেকে জানিয়েছেন বিজিবির মামলায় চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত ৩/৪ জন কে আসামী করা হয়েছে। তবে তারা ঘটনার দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, ঐ দিন তারা সুরইঘাট বাজারে ছিলেন। ভারতীয় সিগারেট আটক নিয়ে বিজিবির উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে প্রকৃত অপরাধীদের মামলায় আসামী করে এলাকায় জনমনে স্বস্থি ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।