জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট দূর হোক

54

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও জীবনযাত্রায় রীতিমতো বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বহু মানুষ পরিবেশ উদ্বাস্তু হয়ে পড়তে পারে। নোনা পানির আগ্রাসন ক্রমেই বাড়বে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে মরুকরণ প্রক্রিয়া। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো বাংলাদেশে ক্রমেই বেশি করে আঘাত হানছে। এতে খাদ্য উৎপাদনও ব্যাপক হারে কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে যেখানে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পেয়েছে প্রায় সর্বনিম্ন সহায়তা। এর জন্য বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাব যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী বাংলাদেশের দাবি উত্থাপনের দুর্বলতাও।
জানা যায়, বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৪০০ মিলিয়ন ডলার। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের একটি প্রকল্পেই পেয়েছে ১৫.৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, কঙ্গো, নেপাল, ফিলিপাইন, কেনিয়া, মোজাম্বিক, ঘানা, চিলি, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের প্রতি এমন বিমাতাসুলভ আচরণের কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর জন্য প্রধানত দায়ী আমাদের নিজস্ব ব্যর্থতা। সঠিকভাবে নিজেদের দাবি ও প্রকল্প তুলে ধরতে না পারা। রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আমরা জাতিসংঘের সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) থেকেও এ পর্যন্ত ৮০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছি। বাংলাদেশকে এই তহবিলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে ২০১৬-১৮ মেয়াদের জন্য স্থায়ী সদস্যপদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বছর না যেতেই বাংলাদেশকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ ছিল মূলত আমলাদের গাফিলতি। শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পাদনে অবহেলা ও অদক্ষতা, ফোরামের বৈঠকে নতুন নতুন প্রতিনিধি পাঠানো ও তাতে কাজের পরম্পরা ব্যাহত হওয়া এবং এমন আরো কিছু কারণে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই অবস্থা দেখা যায় পরিবেশসংক্রান্ত বিভিন্ন সম্মেলনেও। সেগুলোর প্রতিনিধি হয়ে আমলারা বিদেশ ভ্রমণে যান। গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন বাদ দিয়ে তাঁদের ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগও পাওয়া যায়। অবস্থা এমন হলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য বরাদ্দ আদায় করবে কিভাবে?
১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর মেয়াদি যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে দশমিক ৫ মিটার বা প্রায় ২০ ইঞ্চি। এতে সুন্দরবনের ৪২ শতাংশ এলাকা ডুবে যাবে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় দুই হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ডুবে যাবে এবং প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকট মোকাবেলায় যেমন রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন প্রশাসনের আন্তরিকতা ও সঠিক পদক্ষেপ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে আমাদের কার্যকর ভূমিকা রাখা অত্যন্ত জরুরি।