ঠকা

70

হাজেরা সুলতানা হাসি
আমজাদ আলী ও আসজাদ আলী নামে দুই সহোদর ভাই এক গ্রামে বাস করতেন। বাবা একজন সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। খুবই বিলাসিতায় জীবন পার করলেও ছেলেদের পাওনা অংশ তিনি ঠিকই আমানত হিসেবে রেখেছেন। একবার তিনি অন্যদেশে সফরে থাকাকালীন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুঝতে পারলেন তিনি, মৃত্যুর আর বেশিদিন নেই বাকি। তিনি সেখানের বাংলাদেশী এক ব্যক্তির মাধ্যমে দেশে এসে পৌঁছেন। দু’ছেলেকে কাছে পাওয়া মাত্রই তিনি জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। ছেলেরা ও প্রাণপ্রিয় বাবাকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। এভাবে দশদিনের মধ্যেই অসুস্থ থাকাবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ছেলেদ্বয়ের যার যার অংশ বন্টন করে দিলেন। একেকজনের সম্পদের অংশের পরিমাণ ছিলো বিরাট। বড় ভাই আমজাদ আলী বাবার মতোই অযাচিতভাবে টাকা উড়াতে লাগলো। ছোট ভাইয়ের অনুরোধ, বারণ সব কিছু উপেক্ষা করে সে ভোগ বিলাসিতায় জীবন পার করতে লাগলো। কিন্ত ছোট ভাই আসজাদ বিচক্ষণতার সাথে তার অর্থগুলো ব্যয় করতে লাগলো। প্রথমে বাড়ি করলো, পরে একটা ব্যবসায় জড়ালো।
কয়েকবছর পর :
আমজাদ আলী আর আসজাদ আলী দু’ভাই ই এখন সংসারী। বৌ বাচ্চা নিয়ে বেশ সুখেই আছে আসজাদ আলী। কিন্ত আমজাদ আলীর অবস্থা যায় যায়। ছোট ভাইয়ের সাহায্যের হাত সবসময়ই তার দিকে প্রসারিত। কিন্ত নিজের কিছুই নেই। অন্যায়ভাবে টাকা উড়িয়ে এখন সে নিঃস্ব। একদিন হঠাৎ তার মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। সে ছোট ভাই আসজাদকে বলল, দ্যাখ, আমি এখন একেবারে ই নিঃস্ব তা তোর অজানা নয়। তুই আমাকে এখন টাকা দে, দেখি কোন ব্যবসায় জড়াতে পারি কীনা? ভাইয়ের কথা শুনে আসজাদ আলী মহাখুশি, সে খুশি ভরা কন্ঠে বলল, আমি তো তোমায় কতোদিন এই কথা বললাম তুমি তো রাজিই হও না। এবার যেহেতু নিজের তরফ থেকেই বলছো, আমি অবশ্যই রাজী। আমজাদ আলী টাকা নিয়ে বাড়ী ফিরলো। সে ব্যবসার উদ্দেশ্যে টাকা নেয়নি, নিয়েছে নিজের চির অভ্যাসনুযায়ী টাকা উড়ানোর জন্য। বউ বাচ্চা নিয়ে সেদিনই বেরিয়ে পড়লো, ঘুরতে লাগলো বিভিন্ন সৌন্দর্যময় জায়গায়। আর ইচ্ছেমতো ওড়াতে লাগলো টাকা। এভাবে এক সপ্তাহের মাথায় সে সব টাকা শেষ করে আগের মতো নিঃস্ব হয়ে পড়লো। আর বাড়ী ফিরে ছোট ভাইয়ের নিকট বলল, ব্যবসার সন্ধানে বেরিয়ে সে কোন চোরের কবলে পরে সব টাকা হারিয়েছে, এতোটুকু বলে সে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সরলমনা ছোট ভাই আসজাদ আলী বিশ্বাস করে নিলো চতুর আমজাদ আলীর সব কথা। আসজাদ আলী সান্ত্বনা দিয়ে বললো, যা হবার হয়ে গেছে। কিছু তো আর করার নেই। তুমি ব্যবসা করার জন্য আবার প্রস্তুত নাও আমি তোমায় যত টাকা লাগে সব দেবো। এভাবে পর পর তিনবার আমজাদ আলী ছোট ভাইয়ের নিকট হতে বিভিন্ন রকমের মিথ্যে কথা বলে টাকা নিতে লাগলো। সরলমনা আসজাদ আলী একসময় ভাইয়ের চতুরতা বুঝতে পারলেও ভাইকে কষ্ট না দেওয়ার জন্য মুখ ফুটে কিছু বলতে পারল না।
আসজাদ আলী এক সময় খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। টানা পনেরদিন ভীষণ অসুস্থতায় সে ছট ফট করতে থাকে। আমজাদ আলী তখনও আসজাদ আলীর তরফ থেকে পাওয়া টাকা নিয়ে তা উড়াতে ব্যস্ত। নিঃস্ব হয়ে সে ছোট ভাইয়ের নিকট এসে জানতে পারলো সে অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য খুব জোরাজুরি করলো। আসজাদ আলী বললো,এ মুহূর্তে আমার নিকট এক পয়সা ও নেই আমি কিভাবে চিকিৎসা করাবো? আমজাদ আলী বললো, সে কি! তুই না সেদিন বললি ব্যংকে তোর টাকা আছে? : তা আছে বটে, কিন্ত বর্তমানে আমার হাতে তো নেই। : আরে পাগল! অসুস্থ হয়ে মরে যাচ্ছিস আর চিকিৎসা করাবিনা নিজের! মরে গেলে টাকা দিয়ে মাথায় বরণ দিবি নাকী? তুই তো অসুস্থ, তোর সাইনসহ আমার নিকট চেকবই দে, আমি টাকা তুলে এনে তোকে নিয়ে যাবো ভালো কোন হাসপাতালে। আমিরে ভাই গরীব, না হয় তো আমার টাকা দিয়েই তোর চিকিৎসা করাতাম…আমজাদ আলীর গলা ধরে এলো। : আসজাদ আলী মৃদু হেসে বললো, আরে! এতে মন খারাপের কি আছে? আমি তো জানিই তোমার টাকা থাকলে আমার চিকিৎসা কবেই হয়ে যেতো। ভাই তো ভাইয়ের বিপদে থাকে। তোমার নিকট টাকা নেই তাই পারছো না, এতে মন খারাপ করার কিছু নাই। আমজাদ আলী ছোটভাইয়ের সাইনসহ চেকবই নিয়ে গেলো। বড় ভাইকে শ্রদ্ধা ও প্রচন্ড বিশ্বাসের ফলে ছোট ভাই আসজাদ চেকবই এ টাকার উল্লেখ করলো না। এ মহা-সুযোগ হাতছাড়া করতে চতুর আমজাদ মোটেই আগ্রহী নয়। সে চেক বই এ টাকার বিরাট একটা অংক লিখে টাকাগুলো তুললো। তার সে মুহূর্তে ইচ্ছে করছিলো, ব্যংক এ জমানো সব টাকাই সে তুলবে। কিন্ত যখন দেখলো, টাকা তোলার পর আর মাত্র এক লাখ টাকা রয়েছে আর তাছাড়া চেকবই এ যতো উল্লেখ ততোই সে টাকা তুলতে পারবে এর বেশি নয়। যাই হোক, স্বার্থ হাসিল করতে পেরে আমজাদ আলী খুশিতে টগবগ। পরবর্তীতে কি হবে সে কথা ভাবার কোন ইচ্ছেই নেই তার। ডাক্তারের সেবায় এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হলো আসজাদ আলী। বাড়ী ফিরে সে লক্ষ্যে করলো, ঘরে খাওয়ার মতো কিছুই নেই। অথচ বড় ভাই আমজাদ তাকে এতোদিন আশ্বাস দিয়ে আসছিলো এই বলে যে, “তোর ঘরের সব খরচাদি আমিই করে দিচ্ছি”। আসজাদ আলীর স্ত্রী তার মতোই সরল মনের। এবং প্রচন্ড ধৈর্য আছে তার। স্বামীকে সুস্থ হয়ে ফিরতে দেখে সে দারুন খুশি। আসজাদ আলী টাকা তুলতে ব্যংকে গিয়ে প্রচন্ড হোচট খেল। (অসমাপ্ত)