বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি

37

যেকোনো অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে অনৈতিক মুনাফা অর্জন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সহজাত প্রবৃত্তি। প্রায় সব ঋতুতেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়। উৎসবের সময় এলেও জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে ডিমের দাম। অথচ প্রান্তিক খামারি বা উৎপাদনকারীরা এর সুফল পাচ্ছে না। যখন খুচরা বিক্রেতারা হালিতে আট টাকা লাভে ডিম বিক্রি করছে, সেখানে একজন খামারি বা প্রান্তিক উৎপাদনকারীকে মাত্র ৫০ পয়সা লাভে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে ডিমের দাম অনেক বেশি। পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা হালি দরে বিক্রি হওয়া ডিম খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছে ৩৮ টাকা দরে। এ কথা ঠিক যে ডিমের উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে খামারিদের অনেকেই ডিম উৎপাদন থেকে সরে এসেছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমেছে। কিন্তু এতে এমন কিছু ঘটেনি যে বাজারে ডিমের দাম এতটা বেড়ে যাবে। আসলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেই ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। শুধু ডিম নয়, ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে বাজারে। সামনে ঈদ। এই সময় নতুন করে মসলার বাজার অস্থির হতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
যেকোনো ছুতায় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া যেন ব্যবসায়ীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটাই যেন অলিখিত নিয়ম এখন। পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পৃথিবীর সব দেশেই খুচরা পর্যায়ের বাজারেও কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কিন্তু আমাদের এখানে তা নেই। নিয়মিত তদারকি হয় না। বাজারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। ফলে মাঝেমধ্যেই বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ক্রেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে বা গণমাধ্যমে অস্থিতিশীল বাজারের তথ্য প্রকাশ পেলে নীতিনির্ধারকদের কিছু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রতিফলন পড়ে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের বাজারে নীতিনৈতিকতার কোনো বালাই নেই। সুযোগ বুঝে এখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কখনো কখনো তৈরি করা হয় কৃত্রিম সংকট। এর মূল্য দিতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের। নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে ভোক্তাদের শুধুই ঠকতে হয় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে। বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত তদারকি ও নজরদারি থাকলে এমনটি ঘটার সুযোগ থাকত না। সময়ে-অসময়ে সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ানোর এই অশুভ তৎপরতা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।