মেয়র প্রার্থী এডভোকেট জুবায়েরের ইশতেহার ঘোষণা ॥ সিলেট হবে সুশাসনের নগর

47

স্টাফ রিপোর্টার :
আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিলেট নাগরিক ফোরাম মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডের নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারস্থ প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। এসময় ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন শরিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, জামায়াতের কেন্দ্রীয়, সিলেট বিভাগীয়, জেলা ও মহানগর, সিলেট নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সিলেটে কর্মরত ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন পোর্টালের বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো: ফখরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সিলেটের আঞ্চলিক দায়িত্বশীল অধ্যাপক ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, লেবারপার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা জহুরুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টি জেলা সভাপতি ক্বারী আবু ইউসুফ চৌধুরী, জাগপা সিলেট মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান আহমদ লিটন, এনডিপি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, বিজেপি সিলেট জেলা সদস্য সচিব ড: একেএম নুরুল আম্বিয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা হাবিবুুর রহমান, জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসাইন খান, ২০ দলীয় জোট সিলেট মহানগর-এর সদস্য সচিব ও এডভোকেট জুবায়েরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, জেলা উত্তরের নায়েবে আমীর উপাধ্যক্ষ সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মো: শাহজাহান আলী, এডভোকেট আব্দুর রব ও ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শাকুর প্রমুখ।
ইশতেহার ঘোষণায় এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন- হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরাণ (রহ.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত সিলেট মহানগরী বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। এই মহানগরী অসংখ্য ওলী-আউলিয়া, আলেম-উলামা ও গুণীজনের পদচারণায় ধন্য। সিলেট অঞ্চলের সকল মানুষের আবেগ আর এখানকার ঐতিহ্যকে এককেন্দ্রে মিলিত করেছে বাংলাদেশের দীর্ঘতম বয়ে চলা নদী সুরমা। এই সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সিলেট মহানগরী। আজ থেকে একশত একান্ন বছর আগে ১৮৬৭ সালে সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি বোর্ড গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এর নাম হয় সিলেট পৌরসভা। ২০০১ সালে সিলেট পৌরসভা ও আশপাশের এলাকাসহ ২৬ দশমিক ৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। এই সিলেট মহানগরী আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ছোট মহানগরী। কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব এখানে বেশি। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এবং বহু সংস্কৃতির ধারক এ মহানগরীর রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে সিলেটের গৌরবময় অবদান। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীসহ জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত আরো অনেকেই এই সিলেটের কৃতি সন্তান।
তিনি আরো বলেন- সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হবার ১৭ বছর পর আগামী ৩০ জুলাই চতুর্থ বারের মতো মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও মর্যাদাপূর্ণ সিলেট মহানগরীর জনগনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে রয়েছে অনেক ব্যবধান। এই ব্যবধানের পেছনে যেমন রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা ও বাস্তব কারণ, তেমনি রয়েছে সুষ্ঠু, বাস্তবধর্মী ও দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং কাঙ্খিত যোগ্য ও সৎ নেতৃত্বের অভাব। সিলেট মহানগরীর মাটি ও মানুষের সাথে রয়েছে আমার দীর্ঘদিনের আত্মিক সম্পর্ক। সর্বস্তরের বসবাসরত নাগরিকের উন্নয়ন, আধ্যাত্মিক মর্যাদা সংরক্ষণ ও মানবিক সিলেট নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমি সিলেট নাগরিক ফোরাম মনোনীত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি মার্কায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। বিশ্বায়নের এ যুগে ‘মানবিক সিলেট’ গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। আর পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত, আধুনিক ও ডিজিটাল নগরী বিনির্মাণই হচ্ছে আমার অঙ্গীকার। এই লক্ষ্য ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা, সমর্থন ও দোয়া এবং টেবিল ঘড়ি মার্কায় মূল্যবান ভোট কামনা করছি।
তিনি সিলেটকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন- ফুটপাত দখলমুক্ত করণ ও সম্প্রসারণ করা হবে। হকারদের পুনর্বাসন ও হলি ডে মার্কেট চালু করা হবে। জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিশুদ্ধ পানির অভাব দূরীকরণ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা হবে। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে উন্নত করা হবে। নিম্ম আয়ের জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে। জবাবদিহি মূলক সিটি প্রশাসন গড়তে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আলোকিত সিলেট সিটি গড়তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। পরিবেশ বিধ্বংসী সকল কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করে সবুজ সিলেট গঠনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পর্যটন বান্ধব মহানগর ও দৃষ্টি নন্দন সিলেট গঠনে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। মাদকমুক্ত মহানগরী গঠন ও নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রবাসী সেবা সেল গঠন, নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন এবং মহানগরীতে জাতীয় মানের একটি চিড়িখানা নির্মাণ করা হবে। বিজ্ঞপ্তি