নবীগঞ্জে বউ-শাশুড়ী খুনের ঘটনা ॥ রহস্য উদঘাটনে আটক ৫ জনকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

50

নবীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে লন্ডন প্রবাসীর মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগমকে নির্মমভাবে হত্যার রহস্যের জট এখনো খুলেনি। লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের মুটিভ উদঘাটনে থানা পুলিশসহ মাঠে নেমেছে পিবিআই, ডিবি, ডিএসবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তারা হলেন- একই গ্রামের তালেব মিয়া, প্রতিবেশী ক্বারী আব্দুস ছালাম, তার ছেলে সাহিদুর রহমান, শুভ রহমান ও রিপন সুত্রধর। এর মধ্যে হত্যার মুটিব উদঘাটনে ৩ জনকে হবিগঞ্জ ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ তাদেরকে ঘটনার রাতে ও সোমবার দিনে নানা স্থান থেকে আটক করেছে। পুলিশের দাবী খুব শীঘ্রই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। বউ-শাশুড়ীর ময়না তদন্ত শেষে গত সোমবার বিকেলে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসলে তাদের একনজর দেখার জন্য ভীড় জমে। নেমে আসে শোকের ছায়া। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠে। ঘটনার খবর পেয়ে লন্ডন থেকে নিহত রুমির স্বামী এবং মালা বেগমের ছেলে আখলাক চৌধুরী ও তার বড় ভাই আলতাব মিয়া চৌধুরী লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় নিহতদের জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে পারিবারক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত সোমবার রাতে নিহত রুমি বেগমের ভাই ডাঃ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১১।
গত সোমবার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন- নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের সংসদ সদস্য এম এ মনিম চৌধুরী বাবু, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী, পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা, নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ আলমগীর চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ বিন হাসান, ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) নাজমা বেগম, জেলা পরিষদ সদস্য এডঃ সুলতান মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ এটিএম সালামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এদিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করলেও তাদের কাছ থেকে কোন ক্লু-উদঘাটিত আদৌ হয়েছে কি-না তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ফলে নির্মম এ হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে এলাকায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কি কারণে বউ-শাশুড়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো এমন প্রশ্ন গ্রামবাসীর। এছাড়া বিয়ের দু’বছরের মধ্যেও লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরী স্ত্রী রুমি বেগমকে লন্ডন নেননি। নির্জন বাড়িতে পুত্রবধূ রুমিকে নিয়ে শাশুড়ী মালা বেগম একা থাকতেন। কাজের ভুয়া পর্যন্ত নেই ওই বাড়িতে। সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল সাদুল্লাপুর নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরের ভিতরে ও বারান্দার মেঝোতে রক্তের দাগ। বিশাল বাড়ি-ঘরে শয়ন কক্ষ ৬/৭টি। উভয় পাশে বারান্দা। বারান্দার চতুর পাশে গ্রীল এবং দু’দিকে কেছি গেইট। কেছি গেইটে ভাংচুরের কোন আলামত লক্ষ্য করা যায়নি। ঘটনার প্রায় ২০/২৫ মিনিট আগেও নিহত রুমি বেগম তার জনৈকা বান্ধবীর সাথে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করেছিল বলে সূত্রে জানা গেছে। অপর দিকে লন্ডন প্রবাসী মৃত রাজা মিয়ার ৩য় স্ত্রী মালা বেগমের একমাত্র ছেলে লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার। তার বিমাতা আরো ৩ ভাই ও ২ বোন রয়েছে। প্রথম স্ত্রী গর্ভে বড় সন্তান আলতাব মিয়া ও ১ মেয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রী গর্ভে ২ ছেলে সোনাওর মিয়া, আক্তার মিয়া ও ১ মেয়ে রাশেদা বেগম। এদের মধ্যে শুধুমাত্র গুলজারের মা নিহত মালা বেগম, সোনাওর মিয়ার মা এবং বোন রাশেদা বেগম ব্যতিত সবাই লন্ডনে অবস্থান করেন। তবে তারা ভাই বোনের মধ্যে পারিবারিক ভ্রাতৃত্ব সুলভ সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানান গ্রামবাসী। অনেকের দাবী অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বউ-শাশুড়ীকে। তবে কোন কারণে খুনীরা তাদের হত্যা করতে বাধ্য হয়েছে কি-না এ নিয়েও কানা ঘোষা চলছে। তবে নেপথ্যে কারন কি থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখতে এবং হত্যাকান্ডের মুটিভ উদঘাটনে ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগমের নির্মম এই হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে গত সোমবার রাতেই বড় ভাই আলতাব চৌধুরীকে নিয়ে দেশে পৌছেছেন লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরী ওরপে গুলজার।