গ্রেফতারের পর হত্যার দায় স্বীকার ॥ আক্রোশ থেকেই মা-ছেলেকে খুন করে তানিয়া ও মামুন

194

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর খারপাড়ায় রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকন হত্যাকান্ডের মূল হোতা তানিয়া আক্তার ও তার স্বামী ইউসুফ মামুনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য আইজিপির নির্দেশে থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নামে পিবিআই’র একটি চৌকস দল। তবে থানা পুলিশ ও পিবিআই তানিয়াকে গ্রেফতার করার জন্য তৎপর হলেও পিবিআই তানিয়ার স্বামী মামুনকে গত রবিবার রাতে বন্দরবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর তানিয়ার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর পিবিআই ও কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম কুমিল্লা জেলায় অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রবিবার রাতেই। কিন্তু থানা পুলিশ পৌঁছার আগেই তানিয়াকে তার বাড়ি তিতাস উপজেলার ঘোষকান্দি থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
গ্রেফতারকৃত তানিয়া আক্তার (২০) ওই জেলার ঘোষকান্দি গ্রামের বেলাল হোসেনের কন্যা। তার স্বামী ইউসুফ মামুন (২২) বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা গ্রামের সারজান খানের পুত্র। মামুন নগরীর তালতলায় একটি ট্রাভেলসে চাকুরি করে আসছে। এদিকে আক্রোশ থেকেই মা-ছেলেকে খুন করেছে তারা এমনটাই জানিয়েছে পিবিআই।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট পিবিআই কার্যালয়ে প্রথম দফায় অনুষ্টিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম মল্লিক তাদের গ্রেফতার ও পালিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন বিষয় গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে তানিয়া ও মামুনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয় পিবিআই। এরপর পূনরায় গতকাল সন্ধ্যায় আবারও সংবাদ সম্মেলন করে পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, পার্লার ব্যবসায়ী রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকন হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত তানিয়া ও মামুন। কয়েকদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ি তারা এই হত্যাকান্ড ঘটায়। হত্যাকান্ডের আগে কেউ যাতে তাদেরকে সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য তানিয়া ও মামুন খারপাড়াস্থ রোকেয়াদের ভাড়াটিয়া বাসায় যাতায়াত বৃদ্ধি করে। গত ৩১ মার্চ শনিবার রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ি রোকেয়া, তার ছেলে রোকন ও মেয়ে রাইসাকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ায় তানিয়া ও মামুন। সবাই যার যার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লে তারা শ^াসরোধ করে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদেরকে হত্যা করে। এরপর তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মামুন ও তানিয়া ধারালো ছোরা দিয়ে তাদের দুজনের দেহ ছুরিকাঘাত করে ছিন্নভিন্ন করে পরদিন রবিবার ভোরে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন-খরাদিপাড়ার ১৫/জে বাসাতে মাদক ও নারী ব্যবসা চলছিল কয়েক মাস থেকে। নিহত রোকেয়া বেগম তানিয়া আক্তারসহ অন্যনারীদেরকে বাধ্য করতেন তার বাসায় নারী ব্যবসার জন্য। রোকেয়া বেগমের ছেলে সবই জানত। কিন্তু মায়ের কারণে কাউকে এ বিষয়ে কিছুই বলত না সে। এনিয়ে তানিয়ার সাথে রোকেয়া বেগমের অনেকবার বাকবিতন্ডা হয়। এ বিষয়টি তানিয়া তার দ্বিতীয় স্বামী ইউসুফ মামুনকে জানালে তারা দুজন মিলে হত্যার পরিকল্পনা করে। তিনি আরও জানান, হত্যা করার জন্য তানিয়া ও মামুন গত ৩১ মার্চ রাতে তারা দুজনই বেড়াতে আসে রোকেয়ার ভাড়াটিয়া বাসায়। এ সময় তারা ঘুমের ঔষধ ও সাথে ছোরা নিয়ে আসে। হত্যার পর মামুন নিজের ব্যবহৃত সীম বদল করে সিলেটে এবং তানিয়া চলে যায় কুমিল্লায়। তারা দুজনই আক্রোশের কারণেই এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রায় ১বছর পূর্বে তানিয়ার সাথে বিয়ে হয় বিশ^নাথের ইউসুফ মামুনের। আজ মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।