তরুণদের মধ্যে অপরাধ বাড়ছে

36

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন তরুণ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে গেছে। কোথাও বন্ধুদের হাতে খুন হচ্ছে স্কুল বা কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। উঠতি বয়সী তরুণরা অবলীলায় খুন-খারাবির মতো ঘটনায় জড়িত হয়ে পড়ছে। কিছুদিন আগে হোলি উৎসবে ডেকে নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। উঠতি বয়সীরা কেন ভয়ংকর সব অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, সামান্য কারণেই ঘটছে এসব খুন-খারাবির ঘটনা। কোথাও খুনের নেপথ্যে রয়েছে কিশোর প্রেম। কোথাও এলাকার সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব। কোথাও নিছকই বীরত্ব দেখাতে গিয়ে খুনের মতো জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর বয়সীরা।
সমাজ নিয়ে যাঁদের চিন্তা-ভাবনা, তাঁরা বলছেন, আজকের দিনে এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে মা ও বাবা কর্মজীবী। নিজেদের ক্যারিয়ার দেখতে গিয়ে অনেকেই ছেলেমেয়েদের দিকে ঠিকমতো দৃষ্টি দিতে পারেন না। অন্যদিকে যৌথ পরিবার প্রথা উঠে গেছে অনেক আগেই। এমন অনেক পরিবারই পাওয়া যাবে, যেখানে পারিবারিক অনুশাসন বলতে কিছু নেই। যেখানে মা-বাবা দুজনই দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকেন, সেখানে উঠতি বয়সীদের দেখার কেউ নেই। এই সময়ে সহজলভ্য প্রযুক্তি একজন কিশোর বয়সীকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে, তা কেউ বলতে পারে না। আগের দিনে পাড়া-মহল্লায় সামাজিক অনুশাসন ছিল। আজকের দিনের নাগরিক জীবন থেকে সামাজিক অনুশাসন উধাও হয়ে গেছে। ফলে একধরনের স্বাধীনতাবোধ থেকেও তরুণ মনন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে চাইছে। বেয়াড়া হয়ে ওঠার বয়সে বেপরোয়া হয়ে ওঠার সব রসদই কিশোর ও তরুণদের হাতের নাগালে। ফল দাঁড়াচ্ছে এই যে স্বভাবে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে তারা। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই এখন বাণিজ্যপ্রধান। সেখানেও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া হয় না। বাড়িতে কোনো অনুশাসন নেই। পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন ও মূল্যবোধের অভাবেও বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। হাত বাড়ালেই মিলছে ভয়ংকর মাদক। সঠিক পথনির্দেশনারও যেন কেউ নেই। যে সময়ে একজন কিশোর বা তরুণের মনোজগৎ তৈরি হয়, সেই সময়ে সে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ জগতের সঙ্গে। এসব কারণেই পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে গ্যাং গ্রুপ। রাজধানীতে এমন কিশোর গ্যাংয়ের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে অনেক কিশোর।
এ অবস্থা থেকে ফিরতে না পারলে সমাজের যে ভয়াবহ ক্ষতি হবে, তা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু এ থেকে মুক্তির উপায় কী? হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধগুলো নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ নতুন করে তৈরি করতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা অসম্ভব হবে। রোধ করা যাবে না তরুণ বয়সীদের অপরাধপ্রবণতা।