হাকালুকি ও বাইক্কা বিলে পাখি শুমারি সম্পন্ন ॥ পাতি তিলিহাঁস ও পিয়ং হাঁস পাখির দেখা মিলেছে সবচেয়ে বেশি

48

সাইফুল ইসলাম মৌলভীবাজার থেকে :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাইক্কা বিল হাইল হাওরে চলতি শীত মৌসুমে ৩৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। আর মোট পাখির দেখা মিলেছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এরমধ্যে ‘পাতি তিলিহাঁস’ পাখির দেখা মিলেছে সবচেয়ে বেশি। পাখির সংখ্যায় পাতি তিলিহাঁস দেখা গেছে ১ হাজার ৫৮০ টি।
বাইক্কা বিলে পাখি শুমারি শেষে হাইল- হাওরে জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজে ক্রেল প্রকল্পের সাইট অফিসার মো.মনির হোসেন এতথ্য নিশ্চিত করেন।
শ্রীমঙ্গলের হাইল- হাওরের সরকারি সংরক্ষিত মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল গত বেশ কয়েকবছর ধরে পাখির অনিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও পরিযায়ী পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসলেও বাইক্কা বিলে পাখির সংখ্যা এবছর কম।
তবে এবার পাখি শুমারিতে গত বছরের তুলনায় কম পাখির দেখা পাওয়া গেছে। গত বছর (২০১৭) এই বিলে পাখি শুমারিতে ৪১ প্রজাতির ১০ হাজার ৭১৩ টা পাখির দেখা মিলেছিল। আর ২০১৬ সালে দেখা পাওয়া গিয়েছিল ৩১ প্রজাতির ৮ হাজার ৮৩১ টি পাখির।
পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য বাইক্কা বিলে চলতি শীত মৌসুমে পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। প্রতিদিনই পাখিপ্রেমিরা ছুটে আসছেন এখানে পাখি দেখতে। বাইক্কা বিলের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দুরবীনের সাহায্যে পাখি আর বিলের জলজ সম্পদ দেখছেন পর্যটকরা ।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক মুঠোফোনে রবিবার সকালে জানান,জানুয়ারী মাসের ২৪ ও ২৬ তারিখে বাইক্কা বিলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ক্রেল প্রকল্প পাখিশুমারী সম্পন্ন করেছি।এবছর জানুয়ারির শেষে বাইক্কা বিলে ‘পাতি তিলিহাঁস’ বেশি পেয়েছি। ফেব্র“য়ারিতে পাখি শুমারি করলে হয়তো অন্য একটি প্রজাতির হাঁস বেশি পাওয়া যেতো। পাতি-তিলিহাঁসগুলোকে জানুয়ারিতে যেভাবে বেশি সংখ্যায় দেখা যায়, তেমন ফেব্র“য়ারিতে দেখা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, জানুয়ারি মাসের ২৭ ও ২৮ তারিখে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং আই ইউ সি এন, বাংলাদেশের একটি পাখি পর্যবেক্ষক দল টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পাখিশুমারি করে। মোট ৩৬ প্রজাতির ৫৯ হাজার ৫৪২টি পাখি গণনা করা হয়েছে। এরমধ্যে পিয়ং-হাঁস ছিল সবচেয়ে বেশী সংখ্যক, ১৯৭৫২টি। উল্লেখযোগ্য পাখিদের মধ্যে ছিল ১৫০ খয়রা-কাস্তেচরার একটি ঝাঁক, এছাড়া বৈকাল-তিলিহাঁস, পালাসি-কুরাঈগল, উদয়ী-গয়ার।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে,বাইক্কাবিলে বিচ্ছিন্নভাবে অতিথি শিকার করে কতিপয় মৎস্যজীবিরা মাছের সাথে বাসা বাড়িতে এসব পাখি বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার উত্তরসুর ও বরুণা হাজীপুর গ্রামের কতিপয় মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের লোকজন হাওরের বিল লিজের আড়ালে এসব অতিথি পাখি নিধন করছেন। যার ফলে বাইক্কা বিল হাওরে অতিথি পাখির সংখ্যা এবছর কম।
এদিকে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে চলতি শীত মৌসুমে ৪৪ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। আর মোট পাখির দেখা মিলেছে ৪৫ হাজার ১০০ টি। এরমধ্যে ‘পিয়ং হাঁস’ পাখির দেখা মিলেছে সবচেয়ে বেশি। সংখ্যায় পিয়ং হাঁস দেখা গেছে ৫ হাজার ৬৭৫ টি।
হাকালুকি হাওরে পাখি শুমারি শেষে কুলাউড়ায় জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজে নিয়োজিত ক্রেল প্রকল্পের স্থানীয় কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের সরকারি সংরক্ষিত মাছের অভয়াশ্রম বিলে পাখির অনিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিনত হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখির সংখ্যা কম।
বিশ্বের শীতপ্রধান দেশগুলোতে শীত যখন তীব্র হয়ে ওঠে তখন এ দেশের আতিথ্য নিতে ছুটে আসে পরিযায়ী পাখিরা আমাদের দেশে। প্রতিবারের মতো এবারও পরিযায়ী পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসলেও পাখির সংখ্যা কম।
কুলাউড়ায় ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেম অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্প হাকালুকি হাওরের ফিল্ড অর্গানাইজার মো.হেলাল উদ্দিন বলেন,‘বর্ষা মৌসুমে ৪৮০০০ হেক্টর জুড়ে বিশাল এ হাওর আবার শুকনা মৌসুমে হাওরের আয়তন ২৫০০০ হেক্টরে নেমে আসে। এবার পুরো হাওর জুড়ে অতিথি পাখির দেখা মেলেছে। পাখি শিকারীর কারণে এবছর পাখি কম। তিনি আরও বলেন,‘একদিকে গরু মহিষের চড়ানোর কারণে জঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র রক্ষা করতে হলে হাওরের জঙ্গলগুলো রক্ষা করতে হবে। আর এসব জঙ্গল রক্ষার জন্য মিডিয়া সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।’
পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম হক মুঠোফোনে বলেন,‘হাকালুকি হাওরে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং ক্রেল প্রজেক্ট গত ৩ ও ৪ ফেব্র“য়ারি হাকালুকি হাওরে পাখিশুমারি সম্পন্ন করেছি। হাওর মোট ৪৪ প্রজাতির ৪৫ হাজার ১০০ পাখি পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারমধ্যে হাকালুকির হাওড় খালে সবচেয়ে বেশী ১৫ হাজার ৭৩৫টি পাখি দেখা যায়। প্রজাতি অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে পিয়ং-হাঁস ৫ হাজার ৬৭৫টি।
পাখির সংখ্যার দিক থেকে এ বছরটি সেকেন্ড। ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ এই তিন বছরের চেয়ে বেশি পেয়েছি এবার। তবে গত বছরের চেয়ে কম। পরিযায়ী পাখিদের প্রজাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’
এদিকে হাকালুকিতে চলতি শীত মৌসুমে পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। প্রতিদিনই পাখিপ্রেমিরা ছুটে আসছেন এখানে পাখি দেখতে। হাকালুকিতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দুরবীনের সাহায্যে পাখি আর বিলের জলজ সম্পদ দেখে পর্যটকরা হচ্ছেন মুগ্ধ।
হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য আর পাখিদের জলকেলি, ডুবসাঁতার, উড়াউড়ি ও কিচির-মিচির শব্দে বিলে এক মধুর আবহ সৃষ্টি করেছে।