৪৬ বছরে বিজয়ের হিসাব নিকাশ

37

॥ সুলায়মান আল মাহমুদ ॥

১৬ ডিসেম্বর জাতীয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালে এই দিনে মুক্তির স্বাদ লাভ করে বাংলাদেশের মানুষ। এ মাসের সাথে জড়িয়ে আছে কোটি মানুষের আবেগময় স্মৃতি। বিশেষ করে যারা বিজয় দেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। গোটা বিজয়ের মাসই তাদের কাছে একটি পরম পাওয়ার মাস। বাঙালি জাতির বীরত্ব, সাহসিকতা এবং ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর এ মাসটি। এ দিনে জাতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সেইসব বীর সেনানীর সমাধিতে যারা শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়ার জন্য প্রাণের মায়া ত্যাগ করে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাদের।
১৯৭১ সালে এ অঞ্চলের বঞ্চিত শোষিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বন্দুকের নলের ক্ষমতাবলে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ পরিত্যাগ করে তারা বন্দুকের নল আর কামানের গোলা বেছে নেয় সমাধানের উপায় হিসেবে। তারা যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় বাঙালির ওপর। ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে ওঠে অস্ত্রের জোরে বলীয়ান পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালীন হঠকারী সামরিক শাসকশ্রেণী। শুরু হলো মুক্তির সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে দেশের আপামর সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা নামক পরম পাওয়া ধরা দেয় এ দেশের মানুষের কাছে।
বিজয়ের মাস এলে পাওয়া না পাওয়ার নানা হিসাব-নিকাশ আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। এ অঞ্চলের মানুষের চাওয়া খুব বেশি ছিল না পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে। আমাদের যেটুকু পাওনা সেটুকুই আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হোক। বৈষম্য এবং শোষণ বন্ধ করা হোক। কিন্তু যে স্বপ্ন আর আকঙ্খা নিয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্য সেদিন মুক্তিকামী মানুষ জীবনের মায়া তুচ্ছ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা যেন আজ অনেক ক্ষেত্রে স্লান।
একাত্তরের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর এই নয় মাসের লড়াই ও ত্যাগের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি দেশের জন্ম হলো বাংলাদেশ। আমরা স্বাধীন হয়েছি। একটি পতাকা, সার্বভৌমত্ব, একখন্ড স্বাধীন ভূমি পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার আজ ৪৬ বছর পর এসে একটা কথা শুধু, প্রকৃত যে স্বাধীনতা তা আজও পাইনি! লাখ লাখ মানুষের রক্তের ¯্রােত বেয়ে যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, যে দেশের স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন করেছে তা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এর কারণ কী? আসুন আজ সকল ভেদাভেদ ভুলে সুখী, সমৃদ্ধিশালী, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিই। ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো।
আমরা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাই, প্রতিহিংসা নয়। ক্ষমতা সব সময় ধরে রাখার বস্তু নয়। স্থান কাল পাত্রভেদে ক্ষমতার পালা বদল হয়। তবে কেন এত হানাহানি, এত খুনোখুনি। কেন সীমান্তের কাটাতারে আমার বোন ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকবে। কেন সীমান্তে আমার দেশের নিরীহ মানুষকে গুলী করে হত্যা করা হবে। ওরা যদি অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করে তাহলে আইন আছে। তাই বলে গুলী করে হত্যা করতে হবে। এটা কি কোন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি তাচ্ছিল্য আচরণ নয়। বিজয়ের ৪৬ বছরে আমরা স্বাধীনতার একটু সুফল চাই। আমরা বাঁচতে চাই। বিশ্বের মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকা উড়াতে চাই।
বিজয়ের দিবসের এই দিনে জাতির সূর্য সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। বাংলা মায়ের দামাল ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাচ্ছি বিন¤্র শ্রদ্ধা।
পরিশেষে কবির ভাষায় বলতে চাই-
এদেশের জন্য যদি করতেই হয়
আমার এ জীবন দান,
তবু দেবনা দেবনা লুটাতে ধুলোয়
আমার দেশের সম্মান।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।