পরীক্ষার হলে ঘুমানোর ঘটনা ॥ জকিগঞ্জের শিক্ষিকা দীপ্তি রানীসহ ১০ জনকে শোকজ, আজ শিক্ষকদের মানববন্ধন

63

জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মডেল টেস্ট পরীক্ষার হলে ঘুমিয়ে থাকার অভিযোগে জকিগঞ্জের খলাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দীপ্তি বিশ্বাসকে শোকজ করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। একই সঙ্গে উপজেলার আরও ছয়টি স্কুলের ছয়জন শিক্ষিকাসহ মোট ১০ জনকে শোকজ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে এ শোকজের চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনকালে খলাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষার হলে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পান সহকারী শিক্ষিকা দীপ্তি রানী বিশ্বাসকে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা লোকজন চেয়ারম্যানের মোবাইল দিয়ে ছবি ধারণ করে ছড়িয়ে দেন ফেসবুকে। এ ঘটনায় তুমুল সমালোচনার কবলে পড়েন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ ও সহকারী শিক্ষিকা দীপ্তি রানী। এ সমালোচনার মুখেই চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। তিনি তার প্রতিবেদনে দীপ্তি রানীসহ ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
এদিকে শিক্ষিকার অপ্রস্তুত ছবি ধারণের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৩ অক্টোবর ঐ শিক্ষিকার স্বামী সুবিনয় চন্দ্র মল্লিক জকিগঞ্জ থানায় অভিযোগও করেন। অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে এখনও এ অভিযোগের কোন অগ্রগতি হয়নি।
জকিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিজ মিঞ্া বলেন, গত ১৮ অক্টোবর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শন শেষে ৬টি বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবী জানান। অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের শোকজ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে শোকজের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ক্লাস চলাকালীন সময়ে গাফিলতি, ক্লাসে ঘুমানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান।
শিক্ষিকা দীপ্তি বিশ্বাসের স্বামী সুবিনয় চন্দ্র মল্লিক বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শোকজের কোনও চিঠি আমরা পাইনি। এ বিষয়ে আমাদের নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ এখনও মামলা রেকর্ড করেনি। আমি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার জানান, বিদ্যালয় শিক্ষিকার স্বামী সুবিনয় চন্দ্র মল্লিকের দায়ের করা অভিযোগটি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ অক্টোবর জকিগঞ্জের খলাছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মডেল টেস্টের দায়িত্ব পালনের সময় সহকারী শিক্ষিকা দীপ্তি রানী বিশ্বাস টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় ক্লাস পরিদর্শনে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ। এ সময় সঙ্গে থাকা লোকজন চেয়ারম্যানের মোবাইলে ছবি তোলেন এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। পরে এই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে দীপ্তি বিশ্বাস অসুস্থ ছিলেন বলে দাবি করেন তার স্বামী সুবিনয় চন্দ্র মল্লিক।
অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন। বেলা তিনটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্তরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে বলে শিক্ষকরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।