অসহ্য এক সভ্যতার বাসিন্দা

72

ওয়ালিদ

মফস্বল হতে সদ্যই শহরে পা রাখা
আমি এক গেঁয়ো অর্বাচিন যুবক।
যার পরনের উর্দিতে এখনও
গাঁও গেরামের অপরিপক্কতার ছাপ।
চিবুকে, থুতনীর নিম্নদেশে সরু একচিলতে
সদ্য গজানো গুস্ফ উঁকি মারে সলজ্জ সংশয়ে।
আমাকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই মশাই।
আমি আপনাদের আনাড়ি হাতে রচিত নগরে
অতি সামান্য একজন বহিরাগতমাত্র।

মূর্তিমান উৎপাত হয়ে
সুগন্ধিতেল চর্চিত সিঁথির ফাঁকে
আঁকাবাঁকা চোরাগলির নাগরিক যন্ত্রণাবিদ্ধ
দ্বাবিংশ কিংবা ত্রয়োবিংশ পর্বীয় সিরিয়ালের মতো
এই সাজানো শহরটায়
এঁদো ডোবার পুঁতিগন্ধ পাঁক পায়ে
পাড়ার অনাহূত নেড়ি কুকুরের মতো
এসে পড়েছি। অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য।
যাকে দর্শন মাত্রই করুণা ও ঘৃণার
একটা যুগপৎ উদ্রেক হয় বাবুদের, বিবিদের
সিল্ক, আতর লোবান চর্চিত অন্তকরণে।
যাকে দেখলেই আহা, উহু দু’চারটা আলবোলা আর্তনাদ
আলগোছে অষ্ফুটে বাবুরা ছুড়ে দেয়
ঘৃণায় কুঞ্চিত বাঁকা ঠোটে সবলে।

আপনাদের জোর করে গড়া
গুহামানবের কালো যুগ হতে হেঁচড়ে নিয়ে আসা
কৃত্রিম চকচকে সভ্যতাটা
একনজর দেখার হ্যাংলা শখ আমার, বহুদিনের।
কি জাদুবলে সহস্র আদম সন্তানের
আত্মাগুলো স্বার্থের ত্রিশুলবিদ্ধ করে
জমা রাখা আছে নগরের সবচেয়ে উঁচু
পাঁচিলটার কাঁটাতারঘেরা ঘরে। তাকে দেখবার
নাছোড়বান্দা একটা আকাক্সক্ষা আমার আজন্মকালের।

আবেগশূন্য বরফ শীতল মরা মাছের চাউনীতে
মানব নামক দানবীয় প্রাণী
একটা ছেলেভোলানো বিজ্ঞাপনে
মানবতা ফেরি করে বিংশ শতাব্দির ক্যালেন্ডারে
চৈত্রের দুপুরে, পিচগলা রোদ্দুরে
কুকুরের লালাভ জীভ যখন নেতিয়ে পড়ে
পার্টটাইম সমাজকর্মী কিংবা ফুলটাইম ধান্দাবাজরা
পাড়ার ক্লাবের শীতল কক্ষে দেশোদ্ধারে ব্যস্ত থাকে
চর্বিদার গুদামওলা চওড়া ভুড়িখানা এলিয়ে
রদ্দি কাগজের বাসি খবরে
চোখ বোলানোর ব্যস্ততার ফাঁকে
হা করে জিরোয় খানিকটা।

অচেনা এই আদীম শহরটাই কোনো ভোজবাজির মন্ত্রে
উৎসবে পার্বনে আবার জেগে ওঠে
বিস্মৃতির শীতনিদ্রার শয়ান হতে
আবার জীবনে রঙ লাগে
ঢল নামে। বরণের নামে নবরুপি নানা ভড়ঙে
অতঃপর বৈধব্য নামে রাজপথে
জীবন চলে জীবনের অলঙ্ঘ নিয়মে।
অভিশপ্ত জনপদে ঘুম নামে আবার
নেড়ি কুকুরগুলো শুধু ব্যাঘাত ঘটিয়ে যায়
বাবুদের রাতের বিশ্রামে।
আমি অনাহূত গেঁয়ো যুবক
একা রাতের পথ হাঁটি
হলুদ নিয়ন আলোয়, পতিত সভ্যতার গহীনে।