শিকলে বেঁধে শিশুকে শাস্তি

47

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ থেকে :
জাকির মিয়া নামের ১০ বছরের এক শিশুকে শিকলে বেঁধে টানা তিনদিন আটকে রেখে শাসন করা হেয়েছে। Photo-1, (Zakir) Biswanath, Sylhet 03.07.17পরে গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাতে থানা পুলিশের এসআই কল্লোল গোস্মামী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জাকিরকে মুক্ত করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাকে নিরাপদ হেফাজতে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় গত ২/৩দিন ধরে পুরো উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। আজব শাসনের এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন জাকিরের মামা বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের সমেমর্দান গ্রামের ফারুক মিয়া। তবে জাকিরের মামা ফারুক মিয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলেও বিশ্বনাথ থানা পুলিশ ও সমাজসেবা কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, জাকির নামের অনাথ ওই শিশুটি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালা বাজার ইউনিয়নের বহরকাটা গ্রামের মৃত  চমক আলীর ছেলে। প্রায় ৮/৯ বছর আগে তার পিতা চমক আলী মৃত্যুবরণ করেন। পরে ২০১০ সালে মা গেদনি বেগমের অন্যত্র বিয়ে হলে অনাথ এ শিশুটি বিশ্বনাথের বাগিচা বাজারের পার্শ¦বর্তি কামালপুর গ্রামের পালক পিতা ফারুক মিয়ার কাছে বসবাস করে আসছে। সম্প্রতি জাকিরকে পালক পিতা ফারুক মিয়ার কাছ থেকে তার মামা সমেমর্দান গ্রামের ফারুক মিয়া নিয়ে যান এবং অন্যত্র কাজে দেয়ার পাঁয়তারা করেন। কিন্ত জাকির তার পালক পিত্রালয় ছাড়া অন্য কোথাও যেতে না চাইলে মামা তাকে শেকলে বেঁধে রাখেন। ঈদের পরদিন (২৭ জুন) থেকে মামা ফারুক মিয়ার বসত ঘরে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশের এসআই কল্লোল গোস্মামী বৃহস্পতিবার (২৯জুন) রাতে শিশু জাকিরকে উদ্ধার করেন। পরদিন (৩০ জুন) শুক্রবার দুপুরে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাকে স্থানীয় কাশিমপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা এনামুল ইসলাম এনামমের জিম্মায় দিয়ে আসেন। কিন্তু পরক্ষণেই শিশু জাকির তার পালক পিতার কাছে ছোটে যায়। বর্তমানে সে কামালপুর গ্রামের ওই পালক পিতার নিকট ভালই আছে বলে তার পালক পিতা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, বিশ্বনাথ উপজেলা যুবলীগ নেতা এনামুল ইসলাম এনাম বলেন, জাকিরকে তার হেফাজতে দেয়া হলেও বর্তমানে সে তার পালক পিতার কাছেই রয়েছে। কারণ সে খানে স্বাধীনভাবে সে বসবাস করতে পারে বলেই অন্য কোথাও যেতে চায় না।
থানার এসআই কল্লোল গোস্মামী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত ২৯জুন রাতে জাকিরকে তার মামা ফারুক মিয়ার বসত ঘর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে সমাজসেবা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এনামুল ইসলামের জিম্মায় দেয়া হয়।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: আবু ইউছুফ সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিশুটি যাতে কোথাও না যেতে পারে সে জন্যে মামা তাকে বেঁধে রাখেন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করার পর তিনি (সমাসেবা কর্মকর্তা) তার অফিসের ষ্টাফ পাঠিয়ে তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে দেয়া হয়। শিশুটির যাতে অযন্ত না হয় সেজন্যে তিনি প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর রাখছেন বলেও জানান।