নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ ওয়ান-ইলেভেন পুনরায় ঘটবে না ॥ কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসছে ॥ একবার যখন ধরেছি অব্যাহত থাকবে

14
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশন মিলনায়তনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ান-ইলেভেনের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগ থেকেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বলাই যায় (স্পষ্টত) যে ওয়ান-ইলেভেন পুনরায় ঘটবে না। যদি কোন অনিয়ম থেকে থাকে আমি ব্যবস্থা নেব, আমরা ব্যবস্থা নেব এবং সে যেই হোক না কেন এমনকি তারা আমার দলের হলেও। যদি আমি দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে চাই, আমার ঘর থেকেই তা আগে শুরু করতে হবে। নিজের দলের লোকদের আগে ধরছি। চলমান এই অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। প্রধানমন্ত্রী রবিবার বিকেলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্বাগত বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি এহসানুল করিম, জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহী মিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এক শ্রেণীর লোক দুর্নীতির মাধ্যমে ধনী হচ্ছে। এই অর্থ চটের বস্তাতেও লুকিয়ে রাখা হচ্ছে এবং ওয়ান-ইলেভেনের পট পরিবর্তনের পর আমরা এটা দেখেছি। তিনি বলেন, হঠাৎ করে যে সম্পদ আসে তা দেখানো কিছু লোকের স্বভাব। সমাজের এই অংশটিকে আমাদের আঘাত করতে হবে। জনগণের জন্যই তাঁর রাজনীতি এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় জনগণের মঙ্গলের কথাই চিন্তা করি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কুপ্রভাব ভাব যাতে দল বা সমাজে না পড়ে, আমার দল ও সমাজের ওপর ক্ষতিকারক কোন প্রভাব পড়ছে কিনা সেটা আমাকে দেখতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, অনেকে অখুশি। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। সবার জীবনমান উন্নত হোক, এটা আমি চাই। কিন্তু অবৈধ পথে কাউকে সম্পদশালী হতে দেয়া যাবে না।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের জন্য কোন কমিটি করা হবে কি না- এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন রাখলে জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, চলবে। এজন্য কোন বিশেষ কমিটি গঠনের দরকার নেই। দুর্নীতির কোন তথ্য পেলেই আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছি। কখন কোথায় অভিযান চলবে, এখানে বসেও আমি নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, দেশে এখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা সামাজিক বৈষম্য দূর করতে কাজ করছি। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল নিশ্চিত করাটাও এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের লক্ষ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অভিযানে অনেকেই অখুশি হচ্ছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তাতে সরকারের কিছু করার নেই। এই অভিযান চলবেই। দুর্নীতি করে কেউ ছাড় পাবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেয়া চিঠি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, খুনীদের আশ্রয় দেবেন না। তাহলে বঙ্গবন্ধুর খুনীরা কী করে এখানে অবস্থান করে? তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছি।
খুনীদের একজন কানাডায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুনীদের যারা আশ্রয় দিচ্ছে সেটা তাদের জন্যও তো মঙ্গলজনক নয়। তাই খুনীদের ফেরত দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব দেশকেই আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। দামী দামী গাড়ি চড়ছে। যদি সৎভাবে আয় করত, তাহলে এমন হতো না। সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের এই অবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন একটি আঘাত দেয়ার প্রয়োজন ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার যতই বিতর্ক করুক রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক। এই সমস্যা তাদের সৃষ্টি। সমাধানের পদক্ষেপও তাদেরই নিতে হবে। তাদের নাগরিক অন্য দেশে রিফিউজি হয়ে আছে এটা তো তাদের লজ্জা। জাতিগত সংঘাত তারাই তৈরি করেছে, সমাধান তাদেরই করতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারে সে অবস্থা মিয়ানমারকেই তৈরি করতে হবে।
ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, স্পোর্টসকে প্রমোট করার জন্য আমরা নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। কিন্তু এসব সুবিধা ব্যবহার করে এরা যে ক্যাসিনো নিয়ে আসবে ভাবতেও পারিনি। এসব অবৈধ কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য নয়। তাই পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বের হয়ে আসছে। আরও কী বের হয় দেখুন। অপেক্ষা করুনÑ একবার যখন ধরেছি তখন অভিযান অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে কনসার্ট করা যায় কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা এমন উদ্যোগ নিলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে নানা হয়রানির শিকার হয়Ñ এই প্রসঙ্গে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনার দিকে সরকারও নজর রাখে। তিনটি ঘটনার বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এরাই আবার আমাদের দেশের মানবাধিকার নিয়ে বেশি কথা বলে। প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়নে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ তুলেন এক সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিকভাবে ঠিক ঠিক তথ্য দিলে ভেরিফিকেশনে দেরি হওয়ার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজে এই কমিটি গঠন করেছি। সবাইকেই কমবেশি আমি চিনি। কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হবে। কানাডা শাখার কমিটি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা নিয়মিত সাংগঠনিক তৎপরতার অংশ হিসেবে তৃণমূল থেকে দল পুনর্গঠন করছি। এছাড়া দলের একটি ডেটাবেস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। টিম গঠন করে দিয়েছি। ছাত্রলীগের কিছু পরিশ্রমী কর্মী এই কাজে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া সিআরআইর (আওয়ামী লীগের সহযোগী গবেষণা প্রতিষ্ঠান) কিছু সদস্য তাদের সঙ্গে কাজ করছে। সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। দলও যাতে ডিজিটাইজ হয়, আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।