বিয়ানীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
২০০১ সালের ২৯ এপ্রিল সদর ইউনিয়ন নিয়ে বিয়ানীবাজার পৌরসভা ঘটিত হয়। পৌরসভার হওয়ার পর থেকে আজোবদি কোন নির্বাচন হয়নি। এর মধ্যে কেটে গেল দীর্ঘ ১৪ বছর। নির্বাচন না হওয়াতে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন পৌরবাসী। বিঘিœত হচ্ছে নাগরিক সেবা। ৯টি মামলায় আটকে আছে পৌরসভার নির্বাচনসহ অন্যান্য সকল উন্নয়ন কাজ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত অনেক পৌরসভা “এ” গ্রেডে উন্নীত হলেও এখনো তিমিরেই পড়ে আছে বিয়ানীবাজার পৌরসভা। পৌরসভাকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আইনি জটিলতা তৈরী করার জন্য পৌরবাসী দায়ী করেন পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেনকে। পৌরবাসী অভিযোগ করে বলেন, ১৪ বছর থেকে উচ্চ আদালতে তফজ্জুল হোসেন রিট পিটীশন দায়ের করে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন এবং একই সাথে পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে ২০০১ সালে একটি রীট পীটিশন (২৩৭৫/২০০১) উচ্চ আদালতে দাখিল করেন তফজ্জুল হোসেন। ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দুর্নীতির অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করেল মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে আবারও তিনি উচ্চ আদালতে (৯০৬/২০১৩) রীট আবেদন করেন। এই রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত তাকে স্ব-পদে বহাল রাখার আদেশ জারি করে। এ রীট আবেদনের শুনানী উচ্চ আদালতে অব্যাহত রয়েছে।
পৌরসভার নির্বাচন দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদসহ পৌরবাসীর অভিযোগ রয়েছে, নিজের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে তফজ্জুল হোসেন নিজে এবং নিজ বলয়ের লোক দিয়ে একাধিক রীট আবেদন এবং সীমানা সংক্রান্ত আরও ৮টি মামলা উচ্চ আদালতে দায়ের করিয়াছেন। এসব দায়ের করা মামলায় তিনি প্রতারণায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে একজন বাদী সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেন।
উচ্চ আদালতে সীমানা সংক্রান্ত দায়ের করা মামলার (৭৬০৭/০৯) বাদী রাজা মিয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তিনি সীমানা সংক্রান্ত এ মামলার বিষয়ে অবহিত নন। লিখিত পত্রে উল্লেখ করেন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পৌর প্রশাসক তার দায়ের করা পৌর শহরের মাছ বাজারে মৎস্য আড়ত সংক্রান্ত ব্যবসায়ীক মোকাদ্দমা সহকারি ম্যাজিস্ট্রেট বিয়ানীবাজার আদালত (০৯/০৭) এবং হাইকোর্ট রীট পিটিশন (৭৬০৭/০৯) দায়ের করা মামলাটি সীমানা সংক্রান্ত মামলা হিসাবে উচ্চ আদালতে নথিভূক্ত করিয়েছেন। অথচ আমার দায়ের করা মামলা সীমানা সংক্রান্ত কোন মামলা ছিল না বলে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার ধারা পরিবর্তন করে আদালতের সাথে প্রতারনা করা হয়েছে এবং একই সাথে আদালতকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিলেট বিভাগের ১৭টি পৌরসভার নির্বাচন সংক্রান্ত যে তালিকা পাঠিয়েছে তাতে ২০০১ সালে পৌরসভায় উন্নীত বিয়ানীবাজার পৌরসভার নাম ছিল না। এ বিষয়টি জানাজানি হলে পৌরবাসীর মধ্যে হতাশা নেমে আসে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরসভা ২০০১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘটিত হয়। প্রশাসক হিসাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিলে মন্ত্রণালয়ের আদেশের উপর হাইকোর্টে রীট পীটিশন দায়ের করেন বিয়ানীবাজার ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান তফজ্জুল হোসেন। তার দায়ের করা রীট পীটিশন (২৩৭৫/২০০১) এর আলোকে আদালত পৌরসভার প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেন। ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেনের রীট পীটিশনটি আদালত বাতিল করেণ। একই বছর সুপ্রীম কোর্টে তিনি আরও একটি আপীল (১৪২৫/০৯) করেন। এছাড়া উচ্চ আদালতে পৌরসভার সীমানা সংক্রান্ত ৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পৌরসভার শ্রীধরা গ্রামের আবদুল ফাত্তাহ (১৩৭৩/০২), নয়াগ্রামের ফখরুল হুদা খান (২৯৯৮/০২), নবাং গ্রামের আবদুল মান্নান (৪২৫১/০২), নিদনপুর গ্রামের মনির আলী (২৩২৫/০২), লুৎফুর রহমান খান (৩০৩৫/০৩), কুড়ারবাজার ইউনিয়নের লাউঝারি গ্রামের আলকাছ আলী (৯০৬/২০১৩) মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
পৌরশহরের ব্যবসায়ী ও পৌরসভার খাসাড়িপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, একই সময়ে পাশ্ববর্তি গোলাপগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়েছিলো। সেখানকার নাগরিকরা ভাগ্যবান তারা এ পর্যন্ত তিনবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছেন। এবারও তারা ভোট দেবেন। কিন্তুু আমাদের দূর্ভাগ্য এখন পর্যন্ত পৌরসভার ভোট কোন জিনিস বুঝতে পারিনি। তিনি অভিযোগ করেন, পৌর প্রশাসক ও তার অনুগত কয়েক কমিশনার আদালতে সীমানা সংক্রান্ত মামলা দায়ের করায় এ প্রতিবন্দ্বকতা তৈরী করেছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে বিয়ানীবাজার পৌর প্রশাসক মোঃ তফজ্জুল হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা থাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমিও নির্বাচনের পক্ষপাতি, কিন্তুু আদালতের নিদের্শনার বাইরে কারো যাবার সুযোগ নেই। তিনি জানান, এর মধ্যে স্থগিত থাকা ৫টি মামলা (সীমানা সংক্রান্ত) নিষ্পত্তি হয়েছে। আরও ৪টি মামলা বিচারাধীন। বাদী রাজা মিয়ার সীমানা সংক্রান্ত মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মামলা কবে শেষ (নিষ্পত্তি) হয়েছে। সে পৌরসভার উপর মামলা করেছিলো।