মৌলভীবাজারে মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তির শঙ্কা

74

শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজার মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে বিভক্তির শঙ্কা আওয়ামী লীগের মধ্যে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান শক্ত হলেও পৌর নির্বাচন ঘিরে মাথা চাড়া দিচ্ছে দীর্ঘদিনের দলীয় কোন্দল। এতে ত্রিধাবিভক্ত আওয়ামীলীগে আরেক দফা বিভক্তির আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আসন্ন পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হতে মাঠে নেমেছেন দলের চারজন ‘কঠোর’ মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তারা নিজেদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, গত নব্বইয়ের দশক থেকে মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগ তিন ধারায় বিভক্ত। আগে থেকে বিদ্যমান দুটি ধারার একটির নেতৃত্ব দিতেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় হুইপ আজিজুর রহমান এবং অন্যটির নেতৃত্বে ছিলেন এক সময়ের জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়দুদ। তাদের আলাদা নেতৃত্বে দুই ধারায় চলত দলের কার্যক্রম। প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী তখন ছিলেন আজিজুর রহমানের পক্ষে।
কিন্তু ১৯৯৮ সালের জেলা কাউন্সিলে বিরোধীদলীয় হুইপ আজিজুর রহমান ও পৌর চেয়ারম্যান সৈয়দ মহসিন আলী সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নতুন মাত্রা পায় বিভক্তি। কাউন্সিলে আজিজুর রহমানকে হারিয়ে সৈয়দ মহসীন আলী সভাপতি নির্বাচিত হন।
তবে বছর খানেকের মধ্যেই এক ধরনের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আজিজুর রহমানের ভাই প্রয়াত মাহমুদুর রহমান পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এর মধ্য দিয়ে প্রথম নির্বাচনী পরাজয়ের স্বাদ নেন সৈয়দ মহসিন আলী।
এরপর ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে সৈয়দ মহসিন আলী দলীয় মনোনয়ন চাইলে এ বিরোধ চরমে পৌঁছায়। সেবার জাতীয় নির্বাচনে আজিজুর রহমান মাত্র ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
একই কারণে ২০০৬ সালে জেলা কাউন্সিলে সৈয়দ মহসিন আলীর সঙ্গে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আজিজুর রহমানের প্রিয়ভাজন উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি।
এই কাউন্সিলে উপাধ্যক্ষ শহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্যানেল বিজয়ী হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন মহসিন আলীর সমর্থকরা। তাদের অনড় অবস্থানের কারণে ২০০৬ সালে কাউন্সিল হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে চার বছর অপেক্ষা করতে হয়।
২০১০ সালে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় কমিটি। এই কমিটি এখনো দায়িত্ব পালন করছে। আর ১০ বছর হয়ে গেলেও এখনো নতুন কাউন্সিল হয়নি মৌলভীবাজারে।
বর্তমান জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, প্রয়াত মন্ত্রী মহসিন আলীর ছোট ভাই সৈয়দ নওশের আলী খোকন, জেলা যুবলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হোসেন- এই চারজনের নির্বাচনী প্রচারণা চোখে পড়ছে শহরজুড়ে। এর মধ্যে সাইফুর রহমান বাবুল ও ফজলুর রহমান শহরে বিপুল ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার সেঁটে জানিয়ে দিচ্ছেন কাউকে ছাড় দেবেন না তারা।
গত পৌর নির্বাচনেও এ রকম বিভক্তির কারণে মূল্য দিতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে।
২০১০ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল। কিন্তু একই সঙ্গে প্রার্থী হন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমানের ভাতিজা ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হোসেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগ নাহিদকে সাময়িক বহিষ্কার করলেও আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি ও সম্পাদক এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার না করায় দলের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যায়। ফলে বিজয়ী হন বিএনপির বর্তমান মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ বলেন, সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে সহযোগিতা করে তৃণমূলের মর্যাদা দেওয়া সবার উচিত। কিন্তু একটি পক্ষ আলাদা কার্যক্রম চালিয়ে দলের ক্ষতি করছে।
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপাধ্যক্ষ এম এ শহীদ দলে বিভক্তির কথা নাকচ করে বলেন, মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি বা কোন্দল নেই। জেলা ও উপজেলায় গঠিত কমিটিগুলো সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে কেউ যদি নিজেদের কোনো কর্মকাণ্ডকে দলের নামে চালিয়ে দেয়, সেটার দায়-দায়িত্বও তাদের।