ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
অবহেলা ও অনাদরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে ইউনিয়নের ১০-১২গ্রামের ১০ সহস্রাধিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোরায় পৌছে দিতে সরকারের এ উদ্যোগ অনেকটা ভেস্তে উঠেছে। সরকারের উদ্দেশ্য মহৎ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরধারী ও অবহেলার কারণে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সহজ স্বাস্থ্যসেবা থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়নের জটিল ভৌগোলিক অবস্থানের উপর বিবেচনা করে ১৯৯০ সালে সীমান্তবর্তী ছনবাড়ি বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। ইউনিয়নের ছনবাড়ি, রতনপুর, নিজগাঁও, গাংপার, নোয়াকুট, পুরান নোয়াকুট, বনগাঁও, রাসনগর, ধনিটিলা, রহমতপুর ছৈদাবাদ, লোভিয়া, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর, দারোগাখালিসহ পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জের আরো ৫-৬টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের দোড়গোরায় নিশ্চিত স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে ছনবাড়ি বাজারে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়ায় এ সময় এলাকার মানুষের মধ্যে ফিরে আসে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার স্বস্তি। এলাকার সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগও ভোগ করতে শুরু করে। শুরু থেকেই এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চলতে থাকে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে। এরপরও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেনি ভুক্তভোগী মানুষ। চলমান এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি হঠাৎ করেই ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে পড়ে। কিছুদিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষ ফিরে যেতে হয়েছে সেবা বঞ্চিত হয়ে। প্রায় ১৩ বছর ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে এ স্বাস্থকেন্দ্রটি। পরিত্যক্ত এ ভবনের আশপাশ ঝুপ-ঝাড় সৃষ্টি হয়ে এক ভুতুরে বাড়িতে পরিণত হয়। ভবনের দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে। শেওলা জমে ভবনের উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারী এ ভবনটি যেন দেখার কেউ নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার সাথে-সাথে এলাকার মানুষে ভাগ্যে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আবারো এ অঞ্চলের মানুষকে আধুনিক চিৎিসার স্থলে পৌরাণিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। ছাতক সদর হাসপাতাল থেতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ছনবাড়ি বাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। উপজেলার বৃহৎ ইউনিয়ন ইসলামপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। ছোটবড় টিলা বেষ্টিত ও নদী বিধৌত ইউনিয়নের ভৌগোলিক জটিলতার কারণে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সদর হাসপাতালে পৌছতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়। কোন মুমূর্ষু রোগী বা প্রসবকালীন কোন মহিলাকে সদর হাসপাতালে পৌছাতে সরাসরি কোন যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই এখানে। ফলে বাধ্য হয়েই এ অঞ্চলের মানুষের হাতুড়ে ডাক্তার বা ধাত্রীর উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকে না। এতে করে অকালেই জীবন ঝরে যাওয়ার আশংকাই থাকে বেশী। ঝুঁকিপূর্ণ জীবন-যাপন থেকে মুক্তি এবং ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা পেতে এ অঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনরায় খুলে দেয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন। রতনপুর গ্রামের আব্দুল হক, রাসনগর গ্রামের বিনোদ কুমার সিংহ, নিজগাঁও গ্রামের আব্দুল হান্নান, গাংপাড়ের আব্দুল খালিক, বনগাঁওয়ের সেলিম মিয়া ও ধনীটিলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান দেলোয়ার হোসেনসহ লোকজন জানান, কি কারনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে তাদের জানা নেই। চিকিৎসা ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে এখানে। এ অঞ্চলের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের স্বার্থে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার দাবী জানান তারা। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা আলহাজ্ব গোলাম মাওলা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।