কাজির বাজার ডেস্ক
রাজধানীর পান্থপথের গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ‘ভুল চিকিৎসায়’ মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার মামলায় গ্রেফতার দুই চিকিৎসকের জামিন হওয়ায় বিকেল থেকে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন কাজ শুরু হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব সার্জন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কনফারেন্স রুমে ফেডারেশন অব অল সোসাইটি বাংলাদেশের যৌথসভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ‘ভুল চিকিৎসায়’ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় শাহজাদী ও মুনা নামের দুই চিকিৎসকের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন সোহাগের আদালত।
ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারা দেশে ১৭ ও ১৮ জুলাই দুদিন সব চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বার (প্রাইভেট চেম্বার) এবং ব্যক্তিগত অস্ত্রোপচার (প্রাইভেট অপারেশন) বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। গত শনিবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্ত্রী ও প্রসূতিরোগ চিকিৎসকদের সংগঠন ওজিএসবি (অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ) এ সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া এ বিষয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত রোববার (১৬ জুলাই) দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ, জেলা, উপজেলা এবং প্রাইভেট হাসপাতালে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন করেন চিকিৎসকরা। গত ২১ জুন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামানের আদালতে ডা. শাহজাদীর আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১৫ জুন আসামি ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারহা দিবা ছন্দা আসামি মুনার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমি আসামি শাহজাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
গত ১৪ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী। তিনি দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছেন তাদের নবজাতক সন্তানও।
এ ঘটনায় ওইদিনই (১৪ জুন) ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নাম উল্লেখসহ ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। এরপর গত ১৫ জুন রাতে হাসপাতাল থেকে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেফতার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ডা. মিলি, সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ, জমির ও এহসান। গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। এমনকি তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব হবে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
এরমধ্যে প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তার অধীনে মাহবুবাকে ভর্তি করা হয়। তখন ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সংযুক্তা সাহা আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন। এরপর অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে অস্ত্রোপচার করে নবজাতককে বের করা হয়। কিন্তু পরদিন ১০ জুন মারা যায় শিশুটি। আর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জুন দুপুরে মাহবুবা রহমান আঁখি মারা যান।
এ ঘটনায় শুরু থেকেই ডা. সংযুক্তাকে দুষছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল। তবে ডা. সংযুক্ত দোষ দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।