কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত ভারতীয় ৯ দূধর্ষ জেএমবি জঙ্গি এখন বাংলাদেশে। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে এখন জঙ্গিদের আটকের বিষয়ে তৎপর রয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারতের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের মুখে এই জঙ্গিরা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ’র প্রতিবেদনেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ওই ৯ জঙ্গির নাম পরিচয় ও ছবি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। আর ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও ৠাবকে সতর্ক করে দিয়ে জঙ্গিদের গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্ধমান বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতীয় মোট ১৬ জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে ভারতের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়াও সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছে আরো ৯ জন। এই ৯ জনই ভারতীয় বলে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, এরা আর ভারতে নয়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশে পলাতক এই ৯ ভারতীয় জেএমবি সদস্যদের নামের তালিকাও পাঠিয়েছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা। এদের প্রায় প্রত্যেকেরই একাধিক ছদ্মনাম রয়েছে। নামগুলো হচ্ছে- বোরহান শেখ, আবুল কালাম ওরফে আজাদ, হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে শেখ, মাওলানা ইউসুফ শেখ ওরফে বাক্কার ওরফে মুহাম্মদ, জহিরুল শেখ, মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সাকিব ওরফে তুহিন, কাদের কাজী ওরফে কাদের, লাল মুহাম্মদ ওরফে লাল্টু ওরফে ইব্রাহিম ওরফে সাইফ এবং আব্দুল ওহাব ওরফে ওহাব।
গত বছরের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হয়। বোমা বানাতে গিয়েই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনার পর তদন্তের দায়িত্ব পায় এনআইএ। তদন্তে বেরিয়ে আসে ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি জড়িত। ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ওই বাড়িটি ছিল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির। ওই বাসায় বোমা বানানো হতো। এমনকি ওই বাসায় জঙ্গিরা একাধিক গোপন বৈঠক করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ ভিআইপি ব্যক্তিদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে বলেও তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়।
শেখ হাসিনাকে কিভাবে হত্যা করা যায় তার পরিকল্পনাও ওই বাড়িতে বসেই করা হয় বলেও জানায় ভারতীয় গোয়েন্দা। বলা হয়, সীমান্তের খুব কাছাকাছি হওয়ায় বাংলাদেশ ও ভারতের জেএমবিরা সেটিকে নিরাপদ আস্তানা বানিয়ে জঙ্গিদের সেখানেই অবস্থান করতো।
সন্ত্রাস নির্মূলে দুই প্রতিবেশি দেশের একটি লক্ষ্য থাকায় যৌথভাবেই এই জঙ্গিদের দমনের সিদ্ধান্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতের তদন্ত সংস্থা এনআইএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও ভারত সফর করেন। এই সফরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পলাতক জেএমবিদের একটি তালিকা ও ভারতের কাছ থেকেও পলাতক জঙ্গিদের তালিকা হস্তান্তর হয়। আর এই তালিকার সূত্র ধরে দুই দেশই নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
চলতি মার্চ মাসে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ভারতীয় জঙ্গিরাও রয়েছে। আর চিহ্নিত সেই ৯ জেএমবি জঙ্গি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে রয়েছে। পরে ওই ৯ জনের নাম পরিচয় এবং অন্তত ৭ জনের ছবি দিয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিহিত করে।
বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনী জঙ্গিদের গ্রেফতারে কাজ করার নির্দেশ দেয়।
এ প্রসঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা যখন ভারত সফর করি সেই সময়ও আমাদেও নিকট এই নামগুলো দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় তারা এটা বলেননি যে এই জঙ্গিরা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
যেহেতু তারা মনে করছেন জঙ্গিরা বাংলাদেশে এসেছে সেহেতু আমরা আমাদের নজরদারি বড়িয়েছি। র্যাবের যে জঙ্গি দমন সংক্রান্ত বিশেষ সেল রয়েছে তারা বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে, বলেন আবুল কালাম আজাদ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ অনেক ছোট একটি দেশ। এখানে লুকিয়ে থাকার মত ওই রকম নিরাপদ আশ্রয়ও নেই। আমরা আমাদের নজরদারি অব্যাহত রেখেছি তারা বাংলাদেশে থাকলে গ্রেফতার হবে।
এদিকে পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর সারাদেশে পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
সূত্রটি জানায়, শুধুমাত্র ওই জঙ্গিদের নয়, অন্যান্য জঙ্গিদের গ্রেফতারে জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চলছে। আগে গ্রেফতার হয়েছে এমন জঙ্গি ও তদের পরিবারও এই নজরদারির আওতায় রয়েছে।