লিবিয়ায় বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় মিলেছে, ঘটনা তদন্তে নেমেছে লিবিয়া

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
লিবিয়ায় স্থানীয় এক মানবপাচারকারীর পরিবারের সদস্যদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৪ জনের পরিচয় জানা গেছে। একই ঘটনায় আহত ১১ বাংলাদেশির পরিচয়ও মিলেছে।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটি থেকে নিহতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ঢাকাস্থ লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এখনও কারও পরিচয় প্রকাশ করেনি।
নিহত ২৬ জনের মধ্যে পরিচয় পাওয়া ২৪ বাংলাদেশির মধ্যে আটজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে।
নিখোঁজ বা মৃত ২৪ জন হলেন- গোপালগঞ্জের সুজন ও কামরুল; মাদারীপুরের জাকির হোসেন, সৈয়দুল, জুয়েল ও ফিরুজ, জুয়েল ও মানিক, টেকেরহাটের আসাদুল, আয়নাল মোল্লা (মৃত) ও মনির, ইশবপুরের সজীব ও শাহীন, দুধখালীর শামীম; ঢাকার আরফান (মৃত); টাঙ্গাইলের লাল চান্দ; কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাজন, শাকিল, সাকিব ও সোহাগ, রসুলপুরের আকাশ ও মো. আলী, হোসেনপুরের রহিম (মৃত) এবং যশোরের রাকিবুল।
আহত ১১ জন হলেন- মাদারীপুরের তিনজন ফিরোজ বেপারী, মো. আলী ও সম্রাট খালাসী। ফরিদপুরের মো. সাজিদ, কিশোরগঞ্জের তিনজন মো. জানু মিয়া, সোহাগ আহমেদ ও মো. সজল মিয়া। গোপালগঞ্জের ওমর শেখ, টাঙ্গাইলের মো. তরিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার দুজন মো. বকুল হোসাইন ও বাপ্পী।
বৃহস্পতিবার লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে স্থানীয় এক মানবপাচারকারীর পরিবারের সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। এদের সঙ্গে চার আফ্রিকান অভিবাসীও হত্যার শিকার হয়েছেন। আর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১১ বাংলাদেশি।
আহত ১১ বাংলাদেশির মধ্যে ৬ জন সুস্থ:
লিবিয়ায় গুলিতে আহত ১১ বাংলাদেশির মধ্যে ৬ জন সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। বাকিদের অবস্থা কিছুটা বিপজ্জনক। তবে এদের মধ্যে তিনজনের অপারেশন হয়েছে এবং বাকি দুইজনেরও অপারেশন করা হবে।
শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘লিবিয়ায় আহত ১১ জনের মধ্যে ছয় জন এখন সম্পূর্ণ সুস্থ এবং বাকি পাঁচ জনের অবস্থা সঙ্গিন। এদের মধ্যে তিনজনের অপারেশন হয়েছে এবং বাকি দুই জনেরও অপারেশন হবে।’
ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আহতদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় বুলেট লেগেছে এবং সেগুলো বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। লিবিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আমাদের সহায়তা করছে।’
মৃতদেহগুলো মিজদাহ শহরে একটি হাসপাতালের মর্গে আছে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘মৃতদেহগুলো মিজদাহ শহরে একটি হাসপাতালের মর্গে আছে। আমরা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে অনুরোধ করেছি তাদের একটা ব্যবস্থা করার জন্য। এই ঘটনায় আমাদের মিশন লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে।’
মোমেন বলেন, ‘আমরা দাবি করেছি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এবং দোষী ব্যক্তিদের তথ্য আমাদের দেওয়ার জন্য।’
এদিকে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন অবৈধ অভিবাসীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, লিবিয়ার মিজদা শহরের এক নাগরিক অবৈধ অভিবাসীদের উপকূলীয় শহরে পাচারকালে তাদের হাতে নিহত হন। এতে ওই ব্যক্তির স্বজনেরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেন এবং বাংলাদেশের ২৬ জন ও আফ্রিকার চারজনকে হত্যা করেন। এ সময় আহত হন আরও ১১ জন।
লিবিয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মিজদা শহরের নিরাপত্তা বিভাগকে দোষীদের গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় সবধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
দেশটি বলছে, এই গণহত্যার পেছনে উদ্দেশ্য যা-ই থাক, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অনুমতি কারোরই নেই।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাংলাদেশিসহ ওই অভিবাসীদের মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জিম্মি করে রেখেছিল একটি মানবপাচারকারী চক্র। একপর্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন অভিবাসীরা। এতে এক পাচারকারী মারা যান। এর প্রতিশোধ নিতেই তার পরিবারের লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
মোয়াম্মার গাদ্দাফির সময় থেকে তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশ লিবিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্যতম বড় শ্রমবাজার। এই দশকের শুরুতে আরব বসন্তের জেরে গাদ্দাফির পতনের পর গৃহযুদ্ধ বেঁধে গেলে লিবিয়ার শ্রমবাজারও ধাক্কা খায়। একপর্যায়ে তারা হয়ে ওঠে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার প্রধানতম রুট। প্রতি বছর এশিয়া-আফ্রিকার বহু মানুষ এই রুট ব্যবহার করে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন।