কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হয়েছে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। গতকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাবলিগ জামাত আয়োজিত বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ জমায়েত। দ্বিতীয় পর্বেও ইজতেমা ময়দানকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় দেশের বৃহত্তম জুম্মার নামাজের জামাত। ৩৩টি জেলার নির্ধারিত তাবলিগ অনুসারী ছাড়াও দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি এ নামাজে শরিক হন। বিএনপি জোটের অবরোধ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে ভোর থেকেই টঙ্গীতে আসতে থাকেন মুসল্লিরা। জুম্মার আগেই ১৬০ একরের ইজতেমা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক ও খোলা জায়গা ভরে যায় মুসল্লিতে। টঙ্গী থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, উত্তরা-আশুলিয়া ও টঙ্গী-কামারপাড়া সড়কে দীর্ঘক্ষণ যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইজতেমা উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শেষ হবে।
আয়োজকরা জানান, শুক্রবার জুম্মার নামাজে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বের ৮৮টি দেশের প্রায় ৫ হাজার মেহমান এতে যোগ দেন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে জুম্মার খুতবা এবং নামাজ পড়ানো হয় উত্তরা ১০নং সেক্টরসংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে। ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের। বাদ ফজর থেকে জুম্মার আগ পর্যন্ত ইজতেমার প্রথম বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ইসমাইল হোসেন গোদরার। তার উর্দু বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ করেন মাওলানা নুরুল রহমান। এদিকে বুধবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ইজতেমায় আগত চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বাথরুম থেকে পড়ে গিয়ে এবং বাকি তিনজন বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান।
ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে আজ ঈমান-আমলের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করবেন তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিরা। তবে আজকের কর্মসূচির অন্যতম আকর্ষণ থাকবে যৌতুকবিহীন গণবিয়ে। আসরের পর এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য শুক্রবার পর্যন্ত ৬০ যুগলের তালিকা করা হয়েছে। রোববার সকালে হেদায়েতি বয়ান শেষে জোহরের আগেই অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। প্রথম পর্বের মতো এ মোনাজাত দিল্লির মাওলানা সা’দ পরিচালনা করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে শুক্রবার ইজতেমা ময়দানের জুম্মার নামাজের পর টঙ্গীর আশপাশের সব সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকাল ৩টা পর্যন্ত এসব সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। অসহনীয় যানজট থেকে বাঁচতে অনেকে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরেন।
দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ প্রসঙ্গে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ জানান, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় সাড়ে ৯ হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। মুসল্লিবেশে গোয়েন্দা সদস্যরা প্রতিটি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। ইজতেমা মাঠের ৩৯টি খিত্তায়ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইজতেমা মাঠের চারপাশেও কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, র্যাবের এয়ার উইং বৃহস্পতিবার থেকেই ইজতেমা মাঠে হেলিকপ্টার দিয়ে রেকি করছে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য ইজতেমা মাঠে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে সর্বদা নিয়োজিত রয়েছেন। আখেরি মোনাজাতের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।