জৈন্তাপুরে প্রাচীনতম মসজিদ পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ

7

মুরাদ হাসান, জৈন্তাপুর

জৈন্তাপুর প্রাচীন “জৈন্তিয়া রাজ্য” ইতিহাস ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনা ও ধ্বংসাবশেষ মেঘালিথিক চিহ্নের আদলে জৈন্তাপুর উপজেলার সর্বপ্রথম মসজিদটি সরকারি স্কুলের পশ্চিমে অবস্থিত।
১৮০০ শতকের প্রথম দিকে ছোট পরিসরে উপজেলা সদরের চৌরিহাটি এলাকায় জৈন্তিয়া রাজ্যের প্রথম মসজিদটি নির্মিত হলেও সেই সময়কার ধর্মীয় বৈষম্য ও ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে উপজেলার ববরবন্দ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিলো মুসলমানদের প্রথম ইবাদতের এই স্থান। দীর্ঘ দুই শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও জৈন্তিয়া রাজ্যের ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনা যেমন ইরাদেবী, রাজবাড়ী, সারিঘাট পান্তশালা, বড়দেয়াল, রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন কালী মন্দির কিংবা সারী ঢুপিমঠ এলাকার মত স্মৃতি বিজড়ীত হয়ে রয়েছে চৌরিহাটি এলাকায় প্রথম মসজিদের পরিত্যক্ত অংশ ও পাঁচ পীরের মোকাম।
গত কয়েকমাস পূর্বে জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বড়দেয়াল অংশে ভয়াবহ ময়লার ভাগাড় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংস্কার করে সেখানে নান্দনিক ফুলের বাগানে পরিণত করা হয়েছিলো। এ সময় জৈন্তাপুর সদর এলাকায় বানিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ততকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া সদর থেকে কিছুটা অদূরে চন্দ্রাবিল এলাকাকে নির্ধারণ করে দেন।
তবে কিছুদিন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা ময়লা আবর্জনা নিয়মিত স্থানে সংরক্ষণ করলেও পরবর্তীতে বড়দেয়াল যা বর্তমানে ফুলের বাগান সেখান থেকে ২০০ মিটার দূরে পাঁচ পীরের মোকাম ও ঐতিহাসিক প্রথম মসজিদের আশপাশে ফেলতে শুরু করে। যার ফলে মাত্র তিন মাসের মাথায় উক্ত এলাকায় ময়লার ভাগাড়ে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে এলাকাটি। উক্ত এলাকায় দু’’টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি স্কুল ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ আশপাশের সাধারণ মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে থাকেন।
এমতাবস্থায় প্রাথমিকভাবে উক্ত স্থান হতে স্থানীয় চৌরিহাটি সেবা সংঘের উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে ময়লার ভাগাড় অপসারণ সহ প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো দৃশ্যমান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, জৈন্তিয়া রাজ্যের প্রথম মসজিদের সর্বশেষ নিদর্শন, পরিত্যক্ত একটি কুয়া ও কয়েকজন মুসলিম গুণীজনের কবরস্থানের আশপাশের ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে অপ্রয়োজনীয় আগাছা অপসারণ সহ পুড়িয়ে ফেলে পরিস্কারের কাজ চলছে। সেই সাথে উক্ত এলাকার বাউন্ডারি দেয়ালে নতুন রং করে সেখানে জনসচেতনতামুলক বাণী লিখে দেয়া হয়েছে। গত ৭ই ফেব্রæয়ারী থেকে চৌরিহাটি সেবা সংঘের অর্থায়নে কাজ শুরু হয়ে এখন সংস্কার প্রায় শেষের দিকে।
এ বিষয়ে চৌরিহাটি সেবা সংঘের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুস সালাম বলেন, স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে এই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন উক্ত স্থানটিতে আরো সংস্কার বিশেষ করে মসজিদ ও কবরস্থান সংস্কার প্রয়োজন। সে কারণে তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার আহŸান জানান।
জৈন্তাপুর সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহানা জাফরিন রোজী চৌরিহাটি সেবা সংঘের এই কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, বড়দেয়াল এলাকায় ভয়াবহ ময়লার ভাগাড় অপসারণ করার পর স্কুলের দ্বিতীয় গেইটের পাশে পুনরায় ময়লার ভাগাড় সৃষ্টির ফলে আবারও স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিলো শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন বড়দেয়ালের মত উক্ত স্থানটিতে ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর অংশ হিসেবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আহŸান জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে একটা ভোগান্তি শেষ হতে না হতেই পুনরায় মানুষের অসচেতনতার কারণে আবার ভোগান্তি শুরু।
বর্তমানে স্থানীয় উদ্যোগে ময়লা অপসারণ সহ কিছু সংস্কার কাজ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন বিগত সময় বাংলাদেশ প্রতœতাত্তি¡ক অধিদপ্তর ও মেঘালিথ টম্বের উদ্যোগে ইরাদেবী রাজবাড়ী সংস্কার ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বড়দেয়াল ও রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন কালীমন্দির সংস্কার করা হয়েছে। তেমনি জৈন্তীয়া রাজ্যের ঐতিহাসিক প্রথম মসজিদ ও পাঁচ ইসলামি চিন্তাবিদদের কবরস্থান এলাকাটি স্থায়ী সংস্কার অতীব জরুরী। কারণ উক্ত স্থানটি কোন দূর্গম এলাকায় নয় বরং প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচলের মত জনবহুল এলাকায় এটি অবস্থিত। তিনি বলেন উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হলে এর যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ করবে স্থানীয় চৌরিহাটি সেবা সংঘ।