কাজিরবাজার ডেস্ক :
সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগের মামলায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাকির এই ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
এদিকে রিমান্ড শুনানিকালে মান্না সেনাবাহিনীকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রিমান্ড শুনানির শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার ও প্রসিকিউশন পুলিশের সহকারী কমিশনার মিরাস উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত আসামি মাহমুদুর রহমান মান্না টেলিফোন ভাইভারের মাধ্যমে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ওই কাজে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের উৎসাহী করার চেষ্টায় লিপ্ত। তিনি অপর প্রান্তে যে ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন তার নাম ঠিকানা এখানও জানা যায়নি। তাই তার নাম-ঠিকানা জানার জন্য রিমান্ডের প্রয়োজন। তার এই অপরাধ দণ্ডবিধির ১৩১ ধারার অপরাধ।
রিমান্ড শুনানিতে মান্নার পক্ষে রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করা হয়। আইনজীবী খন্দকার আব্দুল মান্নান, সানাউল্লাহ মিয়া, মোহসীন মিয়া, শাহজামান তুহিন হাওলাদার শুনানি করেন। তারা বলেন, তিনি কথা বলেছেন তা তো নিজেই স্বীকার করেন। তবে তার বক্তব্য খণ্ডিতভাবে প্রকাশ করে এই মামলা দেয়া হয়েছে। আসল কারণ হলো তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশেনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাওয়ায় সরকার ভয়ে তার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
আইনজীবীদের বক্তব্য শেষে আসামি মান্না নিজে কিছু বলার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে তিনি বলেন, “আমি আইনজীবী নই, তাই ওনাদের মতো বলতে পারবো না। ওনারা রিমান্ড চেয়েছেন, যদি রিমান্ড চাওয়া এই কারণে হয় যে, মামলার তদন্তের স্বার্থে, তবে আমি বলব, আমি ওইদিন অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, শুধু ওই দুজনের সঙ্গে নয়। আমি যে কথা বলেছি তা কাটাছেঁড়া করে প্রকাশ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি বলেছি, সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কেই কথা বলতে চায়, আমি বলতে পারি। এটা দোষের কী? রিমান্ডে দিয়ে কী হবে। আমি জানি না যারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তারা বিষয়টি বুঝবে কি না।”
মান্না বলেন, “আমি গণতান্ত্রিক অন্দোলনে বিশ্বাস করি। পেট্টল বোমার নিন্দা করেছি। বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক অন্দোলন শুরু করতে। বলেছি ছাত্রদের সংঘটিত করতে। গত বছর ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা ছিল বিতর্কিত নির্বাচন।”
মান্না বিতর্কিত নির্বাচন বলার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা প্রতিবাদে চিৎকার করে ওঠেন। আদালতের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে ফের বলা শুরু করে মান্না। তিনি বলেন, “আমি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করি। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমার আন্দোলন করছি। আমি অসুস্থ, জিজ্ঞাসাবাদ জেলগেটে হতে পারে। আমি বিচার প্রক্রিয়া এড়াতে চাই না।”
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর বনানীর ই-ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের (বাসা নম্বর-১২) তার ভাতিজি শাহনামা শারমিনের বাসা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক করা হয় বলে পরিবার অভিযোগ করে। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, কোনো আইনশৃঙ্খনা বাহিনী মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক করেনি।
কিন্তু বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে র্যাব-২ এর একটি দল মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রসঙ্গত, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দণ্ডবিধির ১৩১ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওই ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন এবং সর্বনিম্ন ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।