সিলেটে আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরো ৪৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার

10

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটে অপারেশন ডেভিল হান্ট আরও জোরদার করা হয়েছে। অভিযানে একে একে ধরা পড়ছেন আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অভিযানের ৩য় দিনে গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট মহানগরী, জেলা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৩ জনকে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সিলেট মহানগরী ও জেলায় ১২ জন, সুনামগঞ্জে ৯ জন, মৌলভীবাজারে জেলায় ২০ জন ও হবিগঞ্জে ২ জন। এদের সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সিলেটঃ সিলেটে অপারেশন ডেভিল হান্টের তৃতীয় দিনে আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। গ্রেফতার সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। মঙ্গলবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। নতুন করে গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিসিকের ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সালেহীন আহমেদ মাহি, জালালপুর ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী দুলাল আহমেদ (৫০) ও জাহির আলী (৩৬)। বুধবার সকালে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এদিকে, বুধবার দিনভর অভিযান চালিয়ে সিলেটে আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. কুতুব মিয়া (৪৮), সিলেট মহানগরের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক মিন্টু (৬১), ১৪ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একরাম সরকার রিপন (৪০), ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সালেহীন আহমেদ মাহি (২৩), শাহপরাণ থানার পীরের চক এলাকার বাসন্দিা আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল আহমদ (৫০) ও সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির খান (৩১)। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
অপরদিকে, বালাগঞ্জে পুলিশী অভিযানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ মতিন এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বিভাস চক্রবর্তী রনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বালাগঞ্জ পূর্ব বাজার থেকে বিভাস চক্রবর্তী রনিকে এবং রাত ৯টার দিকে স্থানীয় চাঁনপুর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান এমএ মতিনকে গ্রেফতার করা হয়। বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফরিদ উদ্দিন ভ‚ইয়া এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জে অপারেশন ডেভিল হান্টের জেলার বিভিন্ন থানা কর্তৃক পরিচালিত এ অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সদস্য তপন সরকার তপু (৫০), দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহŸায়ক প্রিয়তোষ দে চন্ডী (৪৪), উত্তর খুরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষধ্যক্ষ আব্দুর রহমান (৫৮), পাটলী ইউনিয়ন যুবলীগের আহŸায়ক মো. মুহিবুর রহমান (৪৫), শাল্লা থানা কৃষক লীগের সদস্য আরজ আলী (৫৩), রাজনগর ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড মেম্বার সাঈদ আহম্মেদ খসরু (৪৩)।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার আ ফ ম আনোয়ার হোসেন জানান, জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে দোয়ারাবাজারে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন- দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের মৃত সুবেন্দ কুমার সরকারের ছেলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য তপন সরকার তপু (৫০) এবং একই এলাকার আরাধন দে এর ছেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহŸায়ক প্রিয়তোষ দে চন্ডী (৪৪)। দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে, ছাতক উপজেলায় অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মো. আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ধৃত মো. আব্দুর রহমান (৪৮) উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়নের রুক্কা গ্রামের মৃতঃ আব্দুর রহিমের ছেলে এবং উত্তর খুরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।
ছাতক থানার এস আই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সিকান্দর আলী জানান, সরকার বিরুধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতা সৃষ্টির লক্ষে বিভিন্ন যড়যন্ত্র মুলক অপপ্রচার, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সরকারের সম্পদ নষ্ট করতে শলাপরামর্শ করা এবং বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের পতনের আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্রের দায়ে থানায় দায়েরকৃত মামলা (নং ১৫) এর তদন্তে প্রাপ্ত আসামি হচ্ছে মো. আব্দুর রহমান। মো. আব্দুর রহমানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কিবরিয়া হাসান জানান, বুধবার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারঃ অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে মৌলভীবাজার জেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ১৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ৩ নং পশ্চিম জুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শাজাহান মিয়া, ১০ নং দক্ষিণবাগ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শাহাবুদ্দিন, ২ নং ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি আসলাম উদ্দিনপপসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও গ্রেফতারকৃত বাকিরা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে ৩ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে গ্রেফতারের পর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন টিপু, গৌছ মিয়া ও পাভেল মিয়া। এর আগে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। কুলাউড়া থানার ওসি গোলাম আপছার বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
হবিগঞ্জঃ হবিগঞ্জে যৌথবাহিনীর অপারেশন ডেভিল হান্ট’অভিযানে বাহুবল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ঈমান আলীকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে স্নানঘাট বাজারে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। ধৃত ঈমান আলী উপজেলার স্নানঘাট গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর থানায় বৈষম্যবিরোধি মামলা রয়েছে। রাতেই তাকে সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, অপর আরেক অভিযানে নিষিদ্ধ সংগঠন সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জ শহরের নাতিরাবাদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই গ্রামের রেজু মিয়ার ছেলে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার (ওসি) আলমগীর কবির জানান, গ্রেফতারকৃত ঈমান আলী ও সোহাগ মিয়া শহরের বৈষম্যবিরোধি মামলার আসামী। বুধবার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।