স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন সৈয়দ আকমল হোসেন

3

বহু বীরের উৎসর্গে ঋদ্ধ উর্বর পলি মাটির এই বাংলা। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বহু বীরের কাহিনী অকথিত থেকে গেছে। সেইসব বীরের বীরত্ব আর সংগ্রামের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আজকের প্রজন্মের নিজেকে ফিরে দেখার সুযোগ এসেছে। ঐতিহ্য আর ত্যাগের প্রেরণায় অন্যায়, অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এক মহীরুহ ছিলেন সৈয়দ আকমল হোসেন। জীবদ্দশায় ‘বিদ্রোহী সৈয়দ’ হিসেবে খ্যাত সৈয়দ আকমল হোসেন স্কুল জীবনেই রাজপথে নেমেছিলেন অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। স্বাধীনতা, স্বাধিকার, ভাষার জন্য লড়াই থেকে শুরু করে গণমানুষের মুক্তির লড়াইয়ে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। সৈয়দ আকমল হোসেনের মতো সর্বত্যাগী মানুষের জীবনের চর্চার মধ্য দিয়ে সমাজ নিত্য আলোকিত হয়। তাদের জ্বালিয়ে যাওয়া দ্রোহের দেদীপ্যমান আলো আজও সমাজে জ্যোতি ছড়ায়।
শনিবার (৮ ফেব্রæয়ারি) সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে আয়োজিত ‘স্মৃতিতে ও শ্রদ্ধায় সৈয়দ আকমল হোসেন’ স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সৈয়দ আকমল হোসেন স্মৃতি সংসদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নজমুল হক নান্নু। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, ভাষা সৈনিক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মসউদ খান, গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহŸায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও সাবেক সংসদ সদস্য (মৌলভীবাজার-২) ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নবাব আলী আব্বাস খান।
নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিমের সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আকমল হোসেন স্মৃতি সংসদ, সিলেটের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্রনেতা ও স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টা প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান চৌধুরী ওয়েস। সভায় অন্যন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সৈয়দ আকমল হোসেন স্মৃতি সংসদ, সিলেটের উপদেষ্টা সৈয়দ মুহিবুর রহমান।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নজমুল হক নান্নু বলেন, গরীবের দরদী বন্ধু সৈয়দ আকমল হোসেনের জীবন থেকে বর্তমান প্রজন্মকে শিক্ষা নিতে হবে। সৎ, সত্য ও দেশপ্রেমিক মানুষ হতে হবে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের শোষণ মুক্তির সংগ্রামই আমার শেষ কথা।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আজন্ম সংগ্রামী মাটি ও মানুষের নেতা সৈয়দ আকমল হোসেন। প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠ করে আজকের প্রজন্ম ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জানতে পারবে।
চৈতন্য প্রকাশনীর রাজীব চৌধুরী বলেন, সৈয়দ আকমল হোসেনের মতো নিজেকে উজাড় করে দেয়া এ বিরল ব্যক্তিত্বের জীবন ও কর্মের প্রকাশনায় যুক্ত থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
জননেতা মরহুম মাওলানা ভাষানীর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ আকমল হোসেনের জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত ‘স্মৃতিতে ও শ্রদ্ধায় সৈয়দ আকমল হোসেন’ স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন সাবেক ছাত্রনেতা প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান চৌধুরী (ওয়েস), সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন এবং নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম।
গণমানুষের কবি দিলওয়ারের ‘এ নয় ভ‚মিকা’ শিরোনামের লেখা দিয়ে শুরু হওয়া স্মারকগ্রন্থে দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, ভাষা সংগ্রামী গাজীউল হক, প্রাক্তন মন্ত্রী ও ন্যাপ নেতা নুরুর রহমান, অর্থনীতিবীদ ড. আখলাকুর রহমান, রাজনীতিবিদ মহিউদ্দিন আহমদ, নিসর্গবিদ দ্বীজেন শর্মা, ভারতীয় কংগ্রেস নেতা ড. বিজন বিহারী পুরকায়স্থ, অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ, পীর হবিবুর রহমান, কমরেড আসদ্দর আলী, শ্রী নিকুঞ্জ বিহারী চৌধুরী, ভাষা সৈনিক প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, মুহম্মদ আমান উল্লাহ, তাসাদ্দুক আহমেদ, মফিজ আলী, রাশেদ খান মেনন প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের লেখা ছিল। প্রায় তিন দশক পর ‘বিদ্রোহী সৈয়দ’ স্মারক গ্রন্থের সাথে আরো ২৭টি নতুন লেখা ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলিল ও চিত্র যুক্ত করে ২৩২ পৃষ্ঠার স্মারক গ্রন্থ “স্মৃতিতে ও শ্রদ্ধায় সৈয়দ আকমল হোসেন” প্রকাশ করেছে চৈতন্য প্রকাশনী।
প্রসঙ্গত, কুলাউড়ার বিদ্রোহী সৈয়দ নামে খ্যাত সৈয়দ আকমল হোসেন ৪০ বছর পূর্বে ১৯৮৫ সালের ৩০ জানুয়ারি মৃতুবরণ করেন। আজন্ম লড়াকু একজন মানুষ হিসেবে তিনি পুর্ব বাংলায় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। মাওলানা ভাষানীর সহচর হিসেবে মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে চষে বেড়িয়েছেন পুরো বাংলা। নিজের সংসার, চাল চুলোর খবর না রেখে অন্যায় অসাম্যের বিরুদ্ধে আজন্ম এ লড়াকু দেশ মাতৃকার প্রতিটি লড়াইয়ে তাঁর জীবদ্দশায় নিজেকে একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ হিসেবে সম্পৃক্ত থেকে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। মরহুমের উত্তরাধিকার, স্বজন পরিজন ছাড়ায় পুরো অঞ্চলের অগ্রসর মানুষের কাছে সৈয়দ আকমল হোসেন একজন মহীরুহের মতো আজও বিরাজ করেন।