সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ব্যবসায় বিনিয়োগের নামে ৩০ জনের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে একটি পরিবার

3

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটে এক প্রতারক পরিবার ব্যবসার নামে ৩০ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের কয়েকজনকে ব্যাংকে জামিনদার বানিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছে ওই প্রতারক পরিবারের সদস্যরা। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
রবিবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট রায়নগর এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শাহজালাল উপশহরের মোহাম্মদ হোসেনসহ তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবসার নামে প্রায় ৩০ জনের কাছ থেকে বিনিয়োগ করার নামে টাকা পয়সা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, ব্যাংকে জামিনদার বানিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ করেন তিনি। শুধু ব্যবসায় বিনিয়োগ নয় উমরা হজে যাওয়ার কথা বলেও টাকা ধার নিয়ে প্রতারণা করেছে প্রতারক পরিবারটি। একজন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে নগদ টাকার পাশাপাশি আত্মগোপনে চলে যাওয়ার দুই দিন আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা দামের দু’টি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে ফয়সল মো. হোসেন।
তিনি বলেন, মহাজনপট্টি এলাকার হোসেন এন্ড ব্রাদার্স এবং ফাহাদ এন্ড ফয়সল ট্রেডার্স নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক উপশহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন। পাশাপাশি টি.কে গ্রæপের পুষ্টি কোম্পানীর পরিবেশক ছিলেন। পারিবারিক ব্যবসায় তার তিন ছেলে হুমায়ুন মো. হোসেন, ফাহাদ মো. হোসেন, ফয়সল মোহাম্মদ হোসেন এবং ফাহাদ মো. হোসেনের শ্যালক আব্দুল আজিজও জড়িত ছিল। শুধু ছেলেরা নন ব্যবসার কথা বলে মোহাম্মদ হোসেনের স্ত্রী মোছা. রেহেনা বেগম, ফাহাদ মো. হোসেনের স্ত্রী শামীমা খানও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা লেনদেন করতেন। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে হুমায়ুন মো. হোসেন প্রবাসী। অন্য দুই ছেলে দেশে থেকে বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তারা তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার কথা বলে প্রায় ১৮-২০ কোটি টাকা ও তিনটি ব্যাংক থেকে আরও এক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তিনটি ব্যাংকে জামিনদার হিসেবে তার নিজেদের পরিবারের বাইরে কৌশলে তিন জনকে ফাঁসিয়ে রেখে গেছেন। যারা এর আগেও তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। ব্যাংক থেকে প্রতারক পরিবারের সদস্যদের না পেয়ে এর মধ্যে জামিনদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা শুরু করেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের টাকা ফেরত পাওয়াতো দূরের কথা জামিনদার হয়ে ব্যাংকের ঋণের জন্য কারাবরণ করার দুশ্চিন্তায় ভ‚গছেন।
সাইদুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করলে কোম্পানীর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবেন এবং এতে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন এমন আশ^াস দিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করাতেন। পরে বিনিয়োগকারীদের মাসে-দুই মাসে ব্যবসা থেকে লাভ্যাংশের অংশ বাবদ কিছু টাকা দিতেন মোহাম্মদ হোসেন। কিন্তু বেশীর ভাগ অংশ নিজেদের কাছে রেখে দিতেন। গত জুলাই মাসের পর থেকে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত এমনটি বলে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে লাভ্যাংশের টাকা দিতে তালবাহানা করতে থাকেন। এরপর গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর কোম্পানী থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মালামাল সরবরাহ করা হচ্ছে না এতে তার বেশ কিছু টাকা কোম্পানীতে আটকে রয়েছে বলেও বিনিয়োগকারীদের কাছে দাবি করেন। এতে বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরত চাইলে কালক্ষেপ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে নভেম্বরের শেষের দিক থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরা উধাও হয়ে যান। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলেও সেখানে কর্মচারীরা তাদের খোঁজ জানেন না বলে জানান। পরে বিষয়টি মহাজনপট্টির ব্যবসায়ী সমিতিকে লিখিত ভাবে জানানো হয়। এর দুই দিন পর থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এর মধ্যে জানা গেছে মোহাম্মদ হোসেন তাদের জমিজমা বিক্রি করে ফেলেছেন। তাদের উপশহরের বাসায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছেলে ফাহাদ মোহাম্মদ হোসেন ও ফয়সল মো. হোসেন কাতারে অবস্থান করছেন এবং মোহাম্মদ হোসেন ও তার স্ত্রী সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ফাহাদ মোহাম্মদ হোসেন তার স্ত্রীকেও দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে প্রতারণার ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতারক পরিবারের সদস্যদের ধরিয়ে দিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভোগী রোহান আহমদ, সঞ্জীব পালসহ অন্যান্যরা।