বঙ্গবন্ধু টানেল উন্নয়নের আরেক ধাপ

38

উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধারা অব্যাহত রাখতে যোগাযোগ ব্যবস্থার ভ‚মিকাও অনস্বীকার্য। আর এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করল।
তথ্য মতে, এই প্রকল্পের এলাইনমেন্ট পতেঙ্গা প্রান্ত, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর হতে কর্ণফুলী নদীর ২ কিলোমিটার ভাটিতে। আর টানেলের আনোয়ারা প্রান্ত আনোয়ারা উপজেলার কাফকো সার কারখানার নিকটে। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। জানা যায়, দুই টিউববিশিষ্ট চার লেনের টানেল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ও চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা।
এটাও জানা যাচ্ছে যে, প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার। ব্রিজ-ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৭২৭ মিটার (আনোয়ারা প্রান্তে), অ্যাপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার, টোল পস্নাজার দৈর্ঘ্য ৭ হাজার ৬০০ বর্গমিটার, আন্ডার পাস ৬টি (আনোয়ারা প্রান্তে পাঁচটি এবং পতেঙ্গা প্রান্তে একটি), এছাড়া কালভার্ট ১২টি, সার্ভিস এরিয়ার ৩০টি বাংলো, একটি ভিআইপি বাংলোসহ মোটেল মেস, হেলনা সেন্টার, কনভেনশন সেন্টার, জাদুঘর, সুইমিংপুল, ব্রিজ, মসজিদ এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা রয়েছে।
আমরা বলতে চাই, এই টানেলের ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা এবং যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এটাও স্মর্তব্য যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে এই টানেলের জন্য। ফলে এর গুরুত্ব অনুধাবন করা জরুরি। এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর উভয় পাশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চীনের সাংহাই শহরের ন্যায় চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি অ্যান্ড টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলেও জানা যায়। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণে বাণিজ্যিক চুক্তি হয় ২০১৫ সালের ৩০ জুন। পরের বছরের ১৪ অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেছিলেন ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি।
এটাও আমলে নেওয়া দরকার, কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির জন্য এ টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। আর যখন এই টানেল সংযুক্ত করবে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে- অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ গড়ে উঠবে বলে জানা যায়, তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- এই টানেলের জন্য যে ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হতে পারে, সেই সম্ভাবনাকে আমলে নেওয়া এবং তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো।