বর্জ্যে নতুন দ্বার উন্মোচন

9

বর্জ্য থেকে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ জন্য চুক্তি করেছে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (সিএমইসি)। সাভারের আমিনবাজারে প্রায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ হবে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। দেশজুড়ে এ ধরনের আরও অন্তত ৪টি বর্জ্য বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আমিনবাজার প্রকল্পে উৎপাদিত হবে ৪২ দশমিক ৫ মে.ও. বিদ্যুৎ। এ জন্য প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য সরবরাহ করবে সিটি কর্পোরেশন। আমিনবাজারের বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রীডকে খুব একটা সমৃদ্ধ করতে না পারলেও মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন। একই সঙ্গে পাওয়া যাবে বিদ্যুত। আধুনিক ও স্মার্ট নগরে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অন্যতম প্রধান শর্ত। যত্রতত্র বর্জ্য ছড়িয়ে থাকলে একদিকে যেমন নষ্ট হয় নগরীর সৌন্দর্য, তেমনি পরিবেশ দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে নাগরিকরা। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রতিনিয়ত বর্জ্য পরিষ্কার করছে। বর্জ্য ফেলা নিয়ে তাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। নদী-নালায় বর্জ্য ফেলা যায় না। কখনও কোন ডোবা বা নালা ভরাট করতে কিছুদিন বর্জ্য ফেলতে পারলেও এই সুবিধা খুবই সীমিত। বর্জ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প এই সমস্যা সামাধান করবে।
গত বছর নভেম্বর মাসে আমিনবাজারের প্রকল্পটি পাস হয় একনেকে। একই মাসে সিএমইসির সঙ্গে উত্তর সিটির একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। গত এক বছর নানা কারিগরি দিক পর্যালোচনা করে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসির আওতায় বিওও ভিত্তিতে আইপিপি হিসেবে সিএমইসি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ এর ভিত্তিতে বিদ্যুত উৎপাদন হবে ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে। ২৫ বছর মেয়াদী এই চুক্তির প্রেক্ষিতে স্পন্সর কোম্পানি নিজ ঝুঁকিতে প্লান্ট স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির মাধ্যমে নির্বাহ করবে ব্যয়। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব প্লান্ট স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান এবং নিয়মিত বর্জ্য সরবরাহ। যেহেতু প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য প্রয়োজন হবে, তাই মহানগরীর যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকার তেমন সম্ভাবনা থাকবে না। এটি হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ও পরিবেশবান্ধব। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও জেলা পর্যায়ে ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করবে সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের নতুন দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে।