কোটা বাতিলের দাবি সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান কাম্য

7

 

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। একই সময়ে সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের দুটি পৃথক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম থমকে গেছে।
শনি, রবি ও সোমবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরদিন শাহবাগ থেকে ‘বাংলা বøকেড’ তথা সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবরোধ কর্মসূচিও পালিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই, এর ফলে বিভিন্ন স্থানের সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
১৯৭২ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা চালু থাকলেও ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তা সংস্কারের দাবিতে চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবিকে সম্মান জানিয়ে সেই বছরের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সব কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। অবশ্য একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জুন সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। বস্তুত এরপরই আবারও বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দানা বাঁধে। আন্দোলনকারীরা কোটা পদ্ধতি বাতিল, কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছেন।
এ বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই যে, একটা সময় পর্যন্ত জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানসন্ততি ও নারীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরিতে কোটা পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। মাঝে এর ব্যত্যয় ঘটায় জাতির শ্রেষ্ঠসন্তানদের বংশধরদের জন্য দায়বদ্ধতা থেকেই এ সুবিধা যৌক্তিকভাবে হলেও বহাল থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আবার এটাও সত্য, সময়ের পরিক্রমায় পরিস্থিতির পরিবর্তনও ঘটেছে। বিশ্বের সর্বত্র এখন মেধাকে দেওয়া হয় সর্বাধিক গুরুত্ব। আমাদের দেশেও প্রশাসনসহ সরকারি কর্মকাÐে দক্ষতা বাড়াতে মেধার প্রতি গুরুত্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই। চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসানেও এর প্রয়োজন। সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদে চাকরির ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। আবার, সংবিধানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য কোটার বিষয়ে বলা রয়েছে।
আমরা মনে করি, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা একেবারে বাতিল না করে তা সংস্কার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই এ বিষয়ে সুরাহা করা দরকার। এটাও ঠিক, চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন সরকার বা কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। তাদের আন্দোলন অধিকারের প্রশ্নে। তাই এসব দাবি সহানুভ‚তির সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত ছিল। আবার এটাও ভুলে গেলে চলবে না, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের অপসংস্কৃতি নিন্দনীয় ও অপরাধযোগ্য। সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই পরিস্থিতির সুরাহা হবে-এটাই প্রত্যাশা।